রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের দুর্নীতি-বিরোধী অন্যতম সোচ্চার শিক্ষক, আইন
ও ভ‚মি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি মো, শাহরিয়ার পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক পদ হতে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির আবেদনে বেপক অনিয়মের
আশ্রয় নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মো, শাহরিয়ার পারভেজ ২০০৯ সালের ৩০ অক্টোবর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে প্রভাষক পদে যোগদান করেন। বর্তমানে আইন ও ভ‚মি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত আছেন।
মার্চ ২০২১ সালে মো, শাহরিয়ার পারভেজ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালার আলোকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য আবেদন
করেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ১১ নং ভলিউমে প্রকাশনার জন্য দুইটি
গবেষণা প্রবন্ধের স্বীকৃতি পত্র সহযোগ করেন। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালাতে, সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্যতার ক্ষেত্রে,
অন্যান্য শর্তের সাথে একাধিক গবেষণা প্রবন্ধের “প্রকাশিত” থাকার শর্ত আছে। গবেষণা প্রবন্ধ “অপ্রকাশিত” থাকায়, তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর এম আব্দুস সোবহান, মো, শাহরিয়ার পারভেজের পদোন্নতির আবেদনপত্রটি না মঞ্জুর করেন।
পরবর্তীতে, চলতি বছরের ২৯ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য হিসেবে ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু নিয়োগ পেলে, মো, শাহরিয়ার পারভেজ “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ১১ নং ভলিউম প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হবার পূর্বেই তার গবেষণা প্রবন্ধ দুইটি উক্ত জার্নাল প্রিন্টের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান,রাজশাহী শহরের রাণীবাজারস্থ সরকার প্রিন্টিং
প্রেস, থেকে ট্রেসিং পেপারের জন্য প্রস্তুতকৃত কম্পিউটার কম্পোজ কপি সংগ্রহ করেন। এবং আবেদনপত্রে “প্রকাশিত” উল্লেখ করে পুনরায়
জমা দেন সেপ্টেম্বরে ২০২১।
জানা যায় যে, “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ১১ নং ভলিউমের প্রকাশকাল “আগস্ট
২০২১” করার জন্য, মো, শাহরিয়ার পারভেজ তার বিভাগীয় সভাপতির পদকে ব্যবহার করেন এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের
ডিন (অধিকর্তা) নির্বাচনকে সামনে রেখে আইন বিভাগের একাধিক প্রভাবশালী প্রফেসরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জার্নালের এডিটর-ইন-চিফসহ
এডিটরিয়াল বোর্ডকে প্ররোচিত করেন। যদিও এই নিউজ লেখা পর্যন্ত“রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ১১ নং ভলিউমের প্রিন্ট আকারের কোন কপি পাওয়া যায় নাই। জার্নাল বিষয়ে, আইন বিভাগের একাধিক এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্য ও আইন বিভাগের অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা জানায় যে, চলতি বছরের আগস্ট মাসে আইন বিভাগ থেকে “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক কোন জার্নালের ভলিউম প্রকাশিত হয় নাই। তবে “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ১১ নং ভলিউমটি প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হবার জন্য প্রেসে আছে। তবে এখনও প্রিন্ট হয়ে বিভাগে আসেনি বা শিক্ষকদের হাতে পৌঁছাই নাই। তবে জার্নালের এডিটরিয়াল বোর্ডের অন্যতম সদস্য ও আইন বিভাগের সভাপতি কে মুঠোফোনে একাধীক কল দিলেও তাঁকে কোনভাবেই মুঠোফোনে পাওয়া যায় নাই। আইন ও ভ‚মি প্রশাসন বিভাগের একজন শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জার্নাল সংক্রান্তকোন তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তবে বলেন এ সংক্রান্ত যাবতীয় সঠিক তথ্য কেবলমাত্র জার্নালের এডিটরিয়াল বোর্ডের সদস্যরাই দিতে পারেন। উল্লেখ্য, আইন বিভাগ “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ৯ নং ভলিউম থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার উদ্যোগ গ্রহণ করে এবং সে অনুযায়ী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করা হয়। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এই নিউজ লেখা পর্যন্ত চলতি বছরের আগস্ট মাসে প্রকাশিত বা “রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ল রিভিউ” শীর্ষক জার্নালের ১ হতে ১০ নাম্বার পর্যন্ত ভলিউমটি পাওয়া যায়। ১১নং কোন ভলিউম পাওয়া যায় নাই।আইন বিভাগের একাধিক শিক্ষকের কাছ থেকে জানা যায় যে, আইন বিভাগ থেকে “রাজশাহী ইউনিভারসিটি ল রিভিউ” -এর সর্বশেষ ১০ নং ভলিউম প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয়েছে এবং সেটির প্রকাশকাল ২০১৯ সালের ডিসেম্বর। আইন বিভাগের
একাধিক শিক্ষকের মতে, “অপ্রকাশিত” কোন গবেষণা প্রবন্ধকে “প্রকাশিত” বলে পদোন্নতির আবেদনপত্রে উল্লেখ পূর্বক এমন জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে তড়িঘড়ি করে পদোন্নতিকে ত্বরান্বিত করার চেষ্টা, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট, ১৯৭৩ অনুযায়ী নৈতিক স্খলন জনিত অপরাধের সামিল। নাম প্রকাশ না করা শর্তে কয়েকজন শিক্ষক মুঠোফোনে সাংবাদিকদের সাথে কথোপকথনে বলেন, আইন বিভাগ থেকে জার্নালটির প্রকাশকাল “আগস্ট ২০২১” রেখেই প্রিন্ট
আকারে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকাশের জোর প্রচেষ্টা চলছে। যদিও চলতি অক্টোবর মাসের ১০ তারিখেও জার্নালটি প্রেস থেকে প্রিন্ট আকারে প্রকাশিত হয় নাই।
এদিকে আগামী ১৬ই অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, আইন ও ভ‚মি প্রশাসন বিভাগের সভাপতি ও সহকারী অধ্যাপক মো,শাহরিয়ার পারভেজ-এর সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন বলেও জানা যায়।