মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে দুর্গাপূজার কাউন্টডাউন । মন্ডপে মন্ডপে ঢাকের কাঠি পড়তে বাকি আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। পুজোর আগে ঢাকের হাটে, ঢাকিরা অবিরাম বাজিয়ে চলছেন ঢাক। এই হাট বসেছে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে। শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে শনিবার (০৯ অক্টোবর) বিকাল থেকে বসেছে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী এ ঢাকের হাট। যা চলবে সোমবার দিন পর্যন্ত। জনশ্রæতি আছে, ১৬শ শতাব্দীর প্রথমভাগে স্থানীয় সামন্ত রাজা নবরঙ্গ রায়ের হাত ধরে এই হাটের সূচনা।
জানা যায়, ঢাকের বাজনা ছাড়া দুর্গাপূজা অসম্পূর্ণ। মহাষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত আবাহন, বরণ, আরতি ও বিসর্জন সবক্ষেত্রেই চাই ঢাকের আওয়াজ। তাই প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে পৌর এলাকার পুরান বাজারে ঢাকিদের জমায়েত একটি পরিচিত দৃশ্য। এ হাটে ঢাকিরা আসেন মুন্সিগঞ্জ, ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী, সিলেট, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে। পাশাপাশি তাদের নিয়ে যেতে দেশের নানা প্রান্ত থেকে পূজার আয়োজকরা আসেন এই হাটে। শুধু ঢাক নয় কাঁসি, সানাই, করতাল, খঞ্জরি, মঞ্জরিসহ নানা জাতের বাঁশি বাদকেরাও সমবেত হন এই হাটে। এটি দেশের একমাত্র বাদ্যযন্ত্রের হাট।
নামে ঢাকের হাট হলেও, এখানে ঢাক বা কোন বাদ্যযন্ত্র কেনাবেচা হয় না। বাদ্যযন্ত্র বাদকেরা অর্থের বিনিময়ে কেবল পূজা চলাকালীন আয়োজকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হন। কার চুক্তিমূল্য কত হবে, তা নির্ধারণ হয় ঢাকিদের দক্ষতার ওপর। পুজো কমিটির কর্তারা যাচাই করে নেন ঢাকিদের পারফরম্যান্স। বায়না পেতে মরিয়া ঢাকিরা পুজোকর্তার আস্থা জোগাড় করতে আপ্রাণ বাজিয়ে চলেন। কর্তার মন গললে শুরু হয় দরদাম। উভয়পক্ষ সম্মত হলে ঢাকিদের চলে যেতে হয় সংশ্লিষ্ট মন্ডপে। ঢাকের তালে পুজো মাতিয়েই সুখ পান তারা।
সাধারণত একটি ঢাক ১০-১৫ হাজার টাকা, ঢোল ৫-৮ হাজার টাকা, বাঁশি প্রকারভেদে থেকে ৪- ৬ হাজার টাকা, ব্যান্ডপার্টি ছোট ২০-৩০ হাজার টাকা এবং বড় ব্যান্ডপার্টি ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত ভাড়া হয়।
বিক্রমপুরের ঢাকি সনকুমার (৩৫) বলেন, আমার বাপ-দাদারা এই হাটে আসতেন। আমিও এই ঢাকের হাটে ২০ বছর ধরে আসি। প্রত্যেকবারই বায়না হয়ে যায়।
মুন্সিগঞ্জের ঢোল বাদক রতন দাস (৪৫) বলেন, অনেক আশায় থাকি দুর্গাপূজার এই ক’টা দিনের জন্য। এককালীন কিছু বেশি উপার্জন হয় এই দুর্গাৎসবের সময়। প্রতিবছর এই হাটে এসে বিভিন্ন মন্ডপে গিয়ে ঢোল বাজিয়ে আসছি।
কটিয়াদী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিলীপ কুমার সাহা জানান, এই ঢাকের হাটে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ ঢাকি ও বাদ্য বাদকরা আসে। এটি দেশের একমাত্র ঢাকের হাট। আমরা ঢাকি ও যারা বায়না করতে আসে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে থাকি।
কটিয়াদীর পৌর মেয়র শওকত উসমান বলেন, ঢাকের হাট কটিয়াদীর ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য ধরে রাখা হবে।