মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় গজারিয়া জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক; সেন্টার এর বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনা ,অদক্ষ সহকারী চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় পাখি আক্তার নামে এক রোগী মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিহত পাখি আক্তার খুলনা জেলা খালিশপুর থানা সিটি কর্পোরেশন ১২নং ওয়ার্ড ৩নং ক্যাম্পের আবুল কাশেমের মেয়ে।সে গজারিয়া উপজেলা টেংগারচর ইউনিয়ন, ভাটেরচর স্ট্যান্ড সংলগ্ন আফজাল মিয়ার বাড়িতে ভাড়াটিয়া ছিলেন।
গত ৩ অক্টোবর রবিবার বিকালে জরায়ু ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত পাখি আক্তার দেহে রক্ত সঞ্চালন কাজে এক ব্যাগ রক্ত শরীরে নেয়ার জন্য অভিযুক্ত হসপিটালে ভর্তি অবস্থায় এই ঘটনা ঘটেছে। নিহত পাখি আক্তার এর ভগ্নিপতি কামাল হোসেন জানান পাখি আক্তার জরায়ু ক্যান্সারে আক্রান্ত উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা হাসপাতাল থেকে ঢাকা মহাখালী হাসপাতাল প্রেরণ করা হয়। পাখি আক্তার এর দেহে রক্ত নেওয়া জন্য মহাখালী হাসপাতালে যাওয়ার নির্দেশনা থাকলেও অভিযুক্ত গজারিয়া জেনারেল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্তব্যরত সহকারি ডাক্তার এবং উপস্থিত নার্স রক্ত নেয়ার সুব্যবস্থা এখানেই আছে, বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন। তাদের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি ফরমে স্বাক্ষর করে রোগী পাখি আক্তার এর দেহে রক্ত নেয়ার কাজ শুরু করার আধা ঘণ্টা পরেই পাখি আক্তার এর বমি শুরু হয়। পাশাপাশি অন্যান্য পাশ্ব প্রতিক্রিয়া, শ্বাসকষ্ট শরীরে প্রচন্ড ব্যথা দেখা দেয় । উপস্থিত সহকারি ডাক্তার রমেনকে বিষয়টি বারবার জানালেও তিনি কর্ণপাত না করে রোগী পাখি আক্তার কে একাধিকবার অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেন কোন সমস্যা হবে না। এই অবস্থা কতক্ষণ চলমান থাকলে একপর্যায়ে রোগী পাখি আক্তার অজ্ঞান হয়ে পড়েন এবং উপস্থিত সহকারি ডাক্তার ও নার্স তার অক্সিজেন সাপোর্ট খুলে দিয়ে আমাদেরকে এম্বুলেন্স আনতে নির্দেশ দেন। আমরা তখনই বলছি যে রোগী আমাদের জীবিত না মৃত। তারা আমাদেরকে ভুল পরামর্শ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকা পাঠান। ঢাকা মাতুয়াইল হাসপাতালে নেওয়ার পর পরই কর্তব্যরত ডাক্তার জানান রোগী বহু আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। আমরা আবার গজারিয়া জেনারেল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পৌঁছলে কর্তৃপক্ষ ঢাকা থেকে এম্বুলেন্স ভাড়া করে আমাদেরকে কোন কথা বুঝতে না দিয়ে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন পাখি আক্তার এর লাশ। অভিযুক্ত সহকারি ডাক্তার রমেন প্রথমে উপস্থিতি ও নিহত রোগী পাখি আক্তার এর চিকিৎসা কথা অস্বীকার করেন। তিনি স্বীকার করেন গত রবিবার ৩ অক্টোবর ডাক্তার রোজিনা রোগী দেখেছেন। কিন্তু রোগী পাখি আক্তার মৃত্যুর সময় হাসপাতালে ছিলেন না। এক পর্যায়ে রমেন স্বীকার করেন তিনি নিজেই পাখি আক্তার এর দেহে রক্ত নেয়ার কাজ সম্পন্ন করতে চেষ্টা করেছেন কিন্তু ক্যান্সার রোগীর দেহে রক্ত নেয়ার প্রশিক্ষণ তার নাই। রোগী পাখি আক্তার কে জীবিত অবস্থায় ঢাকা পাঠানো হয়েছে। হাসপাতাল মালিক মাহফুজ জানান ক্যান্সার রোগীর দেহে রক্ত দেয়ার কাজ এই হাসপাতালে করা নিষেধ করা আছে । হাসপাতলে নিয়োগপ্রাপ্ত এমবিবিএস ডাক্তার আছে কিনা এই বিষয়ে তিনি জানান একাধিক ডাক্তার রুটিন মাফিক কাজ করেন। তাদের নাম ঠিকানা দিতে হলে পরে সময় সাপেক্ষে দেওয়া যাবে। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায় ইমার্জেন্সি জরুরী বিভাগ কক্ষে পুরানো অপারেশন করা গজ, সিজার অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় একটি বালতিতে পড়ে আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাক্তার শামসুল আলম জানান এমবিবিএস ডাক্তার বিহীন এবং নিবন্ধিত সিস্টার ও সহকারি ডাক্তার ছাড়া কোন বেসরকারি হাসপাতাল এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলতে পারে না। প্রমাণ পাওয়া গেলে মোবাইল কোর্ট করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। রক্ত ট্রান্সমিশন প্রশিক্ষণ সহকারী ডাক্তারের থাকতে হবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেওয়া মাত্রই রক্ত ট্রানস্মিশন অর্থাৎ রক্ত নেয়া বন্ধ করে দিতে হবে। রক্ত নেয়ার সময় ভুল ব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা ত্রুটির কারণে রোগীর মৃত্যু ঘটেছে এমন ঘটনায় লিখিত আবেদন পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।