যশোরের চৌগাছার ব্রোজেশ পাল (৩৪)। পারিবারিক উত্তরাধিকার সূত্রে কুমোর (মাটির পাত্র তৈরির কারিগর) তিনি। তবে অন্য আর দশজনের মতো নন। যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ থেকে ফিলোসফিতে (দর্শন) চার বছরের স্নাতক পাশের পর স্নাতোকত্তোর করেছেন তিনি।
চৌগাছা পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের ইছাপুর পাল পাড়ার বাসিন্দা ব্রোজেশ একই গ্রামের স্বর্গীয় (মৃত) গোবিন্দ পালের ছেলে।
সরেজমিনে ইছাপুর পাল পাড়ায় গেলে দেখা হয় তৈরি মাটির পাট (গ্রামের টয়লেট তৈরির মাটির রিং) পরিচর্যায় ব্যস্ত ব্রোজেশকে। কিছুটা দূরে ব্রোজেশের স্ত্রীও মাটির বিভিন্ন পাত্র খেজুর রস সংগ্রহের কলস (ভাড়) সহ নানা ধরনের দ্রব্যাদি পরিচর্যা করছেন।
অত্যন্ত বিনয়ী যুবক ব্রোজেশের সাথে কথার শুরুতে তিনি যে লেখাপড়া জানেন এমন কিছুই বোঝা যায়না। কয়েক বছর ধরে তিনি কুমোরের কাজ করছেন বলতেই খটকা লাগে। পৈত্রিক পেশা অথচ বলছেন কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন! ব্রোজেশের উত্তরে এবারে চমকে ওঠার পালা। কাজের ফাঁকেই ব্রোজেশ বলতে থাকেন আমি লেখাপড়া করার কারণে বাবা-দাদারাই মাটির পাত্র তৈরির কাজ করতেন। জানালেন যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ থেকে ফিলোসফিতে (দর্শন) ২য় বিভাগে স্নাতোকত্তোর পাশ করেছি। এরআগে সেখান থেকে চারবছর মেয়াদী স্নাতক করেছি। এইচএসসি চৌগাছার এবিসিডি কলেজ থেকে ৩.৭০ জিপিএ নিয়ে। ২০০৩ সালে এসএসসি পাশ করেন চৌগাছার পাতিবিলা হাজী শাহজান আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে।
ব্রোজেশ বলেন, এমএ পাশের পর চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার মত গরীব কুমোরের ছেলেকে কে চাকরি দেবে? বাবার অভাবের সংসারে লেখাপড়া শেষ করেছি এই তো বড়! টাকা দিতে পারিনি, যোগাযোগের মাধ্যম নেই তাই কোনো স্কুল-কলেজে চাকরিও পাইনি। চাকরি প্রচেষ্টার সাথে বেসরকারি আরএফএল গ্রুপে কিছুদিন কাজ করি। এখন সরকারি চাকরির বয়স শেষ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বছর সাতেক আগে বিয়ে করি। পাঁচ বছর বয়সী এক কন্যা আছে আমার। কোম্পানির চাকরিতে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো। পরে সেই চাকরি ছেড়ে গত তিন থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে বাবা-দাদাদের পেশাতেই চলে এসেছি। কুমোরের কাজ করে কোম্পানি চাকরির চেয়ে স্বাচ্ছন্দে আছি।
ব্রোজেশ জানান, এখানে নিজের সাথে স্ত্রীও কাজ করতে পারেন। দুজনের আয়ে সংসার চলে যায়।
তিনি আরো বলেন, অন্য তিনভাই গৌর চন্দ্র পাল, সুশান্ত পাল, প্রভাত পাল ও তাদের স্ত্রীরা একসাথেই আছেন। একসাথেই কাজ করেন। আমরা মাটির বিভিন্ন পাত্র তৈরি করি। এখান থেকেই পাইকারি ও খুচরাতে বিক্রি হয়ে যায়। আগের মত গ্রামে গ্রামে নিয়ে যাওয়া লাগে না। মিথ্যা বলবো না, এটা করেই তো সংসার চালাচ্ছি। আগের থেকে ভালই চলছে। তবে গত দুই বছর করোনার কারণে কিছুটা হলেও কষ্ট হয়ে গেছে। তবে এই সময়ে সরকারি কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ইশতিয়াক আহমেদ বলেন, আলাদাভাবে কামার-কুমোরদের জন্য কোনো প্রণোদনার বরাদ্দ আসেনি। তবে করোনার সময়ে আর্থিক যেসব সুযোগ-সুবিধা এসেছে সেগুলো চেয়ারম্যান-মেম্বারদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে।