শীত মৌসুমে সারাদেশেই যখন শুষ্কতা বিরাজ করছে, তখনও যশোরের ভবদহ এলাকায় জলাবদ্ধতা রয়েছে। জলাবদ্ধতার প্রভাব পড়েছে ইউপি নির্বাচনেও। যশোরের অভয়নগর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৭টি ভোটকেন্দ্র এখনও জলাবদ্ধ রয়েছে। এর মধ্যেই রোববার সকাল ৮টা থেকে সেখানে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্র জানায়, রোববার উপজেলার ৮ ইউনিয়নে ৮৬টি ভোটকেন্দ্রে ভোটগ্রহণ চলছে। তার মধ্যে তিনটি ইউনিয়নের ২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭টি কেন্দ্রে এখনও পানি আটকে রয়েছে। ফলে এসব কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের স্বাভাবিক পরিবেশ নেই।
স্থানীয়রা জানান, যশোরের অভয়নগর উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন ভবদহ অধ্যুষিত এলাকা। ভবদহ স্লুইচগেট দিয়ে পানি নিষ্কাশিত না হওয়ায় এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতা রয়েছে। টেকা, শ্রীহরি ও মুক্তেশ্বরী নদীতে পলি পড়ে নদীর তলদেশ উঁচু হওয়ায় স্লুইচগেট দিয়ে পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। ফলে এই জলাদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়রা আরও জানান, সেপ্টেম্বরে টানা বৃষ্টিতে ভবদহের নিম্নাঞ্চলের প্রায় ৫০টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টির পানিতে এসব গ্রামের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি থেমে গেলে পানি কমতে শুরু করে। এরপর ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের কারণে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে আবারো পানি বেড়ে যায়। ফলে ফের বাড়িঘর, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠে। এখনো তিনটি ইউনিয়নের সাতটি ভোটকেন্দ্রে পানি রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, সুন্দলী ইউনিয়নের ডহর মশিয়াহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুপানি। সড়ক থেকে ভবন পর্যন্ত বালু দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। এই কেন্দ্রে ডহর মশিয়াহাটী (দক্ষিণ) গ্রামের ৯৩৪ জন ভোটার রয়েছেন।
ডাঙ্গা মশিয়াহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে প্রায় দেড় ফুট পানি। এই কেন্দ্রে ডহর মশিয়াহটী (উত্তর) ও ডাঙ্গা মশিয়াহাটী গ্রামের ৯৯৫ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
ইউনিয়নের সড়াডাঙ্গা ডহর মশিয়াহাটী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে রয়েছে হাঁটুপানি। এই কেন্দ্রে সড়াডাঙ্গা ও ভাটবিলা গ্রামের এক হাজার ৩৩৪ জন ভোটার রয়েছেন।
পানি রয়েছে ইউনিয়নের সুন্দলী এসটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে। এই কেন্দ্রে সুন্দলী গ্রামের এক হাজার ৫০৯ জন ভোটার রয়েছেন।
ডহর মশিয়াহাটী গ্রামের বিকাশ মন্ডল বলেন, মাঠে হাঁটুজল। তবে বিদ্যালয়ের কক্ষে পানি নেই। পাশের পাকা সড়ক এবং বিদ্যালয়ের বারান্দায় কষ্ট করে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে হবে।
চলিশিয়া ইউনিয়নের ডুমুরতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের মাঠে প্রায় দু’ফুট পানি। বিদ্যালয়ের সামনের পাকা সড়কেও এক ফুট পানি রয়েছে। ওই কেন্দ্রে ঢোকার কোনো পরিবেশ নেই। এই ভোটকেন্দ্রে ডুমুরতলা, আন্ধা (উত্তর) ও বেদভিটা এই তিন গ্রামের এক হাজার ১৫৯ জন ভোটার রয়েছেন।
ডুমুরতলা গ্রামের মিলন মন্ডল বলেন, ভোটকেন্দ্রের চারপাশে পানি। বিদ্যালয়ের মাঠে ও রাস্তায় হাঁটুপানি। পানি ভেঙে কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে হবে।
ইউনিয়নের আন্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে এক হাতেরও বেশি পানি রয়েছে। এই ভোটকেন্দ্রে আন্ধা (দক্ষিণ) ও চলিশিয়া (পশ্চিম) গ্রামের এক হাজার ২১৪ জন নারী ও পুরুষ ভোটার রয়েছেন।
পায়রা ইউনিয়নের আনন্দ নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটুপানি। ভোটকেন্দ্রে ঢোকার কোনো পরিবেশ নেই। এজন্য বিদ্যালয় থেকে কিছুটা দূরে বড় পুকুরের পাড়ে ফাঁকা জায়গায় অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এই কেন্দ্রে চোমরডাঙ্গা এবং বারান্দী (পশ্চিম) গ্রামের এক হাজার ৭১৭ জন ভোটার রয়েছেন।
বারান্দী গ্রামের আবির হোসেন বলেন, আনন্দ নিকেতন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানির কারণে সেখানে ভোট দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা নেই। সেজন্য পাশেই পুকুর পাড়ে ফাঁকা জায়গায় টিন ও তাবু দিয়ে ঘিরে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। সেখানেই আমরা ভোট দেবো।
অভয়নগর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এস এম হাবিবুর রহমান বলেন, সুন্দলী, চলিশিয়া ও পায়রা ইউনিয়নের সাতটি ভোটকেন্দ্রে পানি রয়েছে। তবে কেন্দ্রগুলোর একটিতে ভোটগ্রহণের কোনো পরিবেশ না থাকায় পাশের ফাঁকা জায়গায় অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র করা হয়েছে। অন্য কেন্দ্রগুলোতে ছ্ত্রা-ছাত্রীরা যেভাবে গিয়ে ক্লাস করে সেভাবে ভোটাররা গিয়ে ভোট দেবেন। ভোটগ্রহণে কোনো অসুবিধা হবে না।