৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ| ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি| বিকাল ৩:২৯| গ্রীষ্মকাল|
Title :
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জননেতা মোঃ আতিকুর রহমান আতিক টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলা ছাত্রদলের উদ্যোগে আগত এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতরণ টাঙ্গাইলের নাগরপুরে নানা আয়োজনে বাংলা নববর্ষ’১৪৩২ উদযাপন নতুন বছরে আপনার জীবন হোক আনন্দে ও সফলতায় ভরপুর, শুভ বাংলা নববর্ষ- জননেতা মীর আবুল কালাম আজাদ রতন নতুন প্রাণ, নতুন গান, বৈশাখ এলো ফিরে,হৃদয়ের সব ক্লান্তি যাক মুছে, শুভ বাংলা নববর্ষ- জননেতা মোঃ শরিফুল ইসলাম স্বপন নতুন বছর মানে নতুন আশা, নতুন স্বপ্ন, নতুন শুরু, নতুন আনন্দে ভরে উঠুক আপনাদের প্রতিটি দিন-জননেতা মোঃ মাইনুল আলম খান কনক পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বাংলা নববর্ষ উদযাপন বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ও সার্বজনীন উৎসব- জননেতা মোঃ আতিকুর রহমান আতিক টাঙ্গাইলের নাগরপুরে শহীদ মীর মাহবুবুর রহমান বাবু স্মৃতি ফাইনাল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট’২৫ অনুষ্ঠিত বিএনপি আয়োজিত ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদ র‍্যালীতে ঢাকা উত্তর জাসাসের নেতৃত্বে জননেতা মোঃ শরিফুল ইসলাম স্বপন টাঙ্গাইলের নাগরপুরে ঘোড়ার গাড়ি শ্রমিক ইউনিয়ন অফিস উদ্বোধন

আধুনিকতার ছোয়ায় হারাচ্ছে গণি মিঞার গামছা

মাসুমা জাহান,বরিশাল ব্যুরো:
  • Update Time : সোমবার, ডিসেম্বর ২০, ২০২১,
  • 234 Time View

ঝালকাঠির বাসন্ডা নদীর পশ্চিম পাড়ের এলাকাটি পশ্চিম ঝালকাঠি নামে পরিচিত। কাগজে যার বর্তমান নাম বাসন্ডা।একসময় এই বাসন্ডার পুরো এলাকা জুড়ে প্রায় দু’শো তাঁতী পরিবার ছিল। যারা হস্তচালিত তাঁত মেশিনে রঙিন সুতায় শাড়ী, লুঙ্গী এবং গামছা বুনতো। মহাজনদের পদচারণা এবং তাঁতের খটাস খটাস শব্দে মুখরিত থাকতো কারিকরবাড়ি।

তখন গোটা দেশে ঝালকাঠির তাঁত শিল্পের গৌরব ছিল।
বর্তমানে বাসন্ডা কারিকর বাড়িতে দু’চারটি তাঁতী পরিবার তাদের এই পেশা ধরে রেখেছে বাকিরা চলে গেছেন অন্য পেশায়। কারণ আধুনিকতার ছোঁয়ায় তাঁতের শাড়ি লুঙ্গীর চাহিদা কমেছে। ৭৫ বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠান ঝালকাঠির গণি মিঞার গামছা সবসময়ই ছিলো দেশসেরা। বছর সাতেক আগে গণি মিঞা বার্ধক্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। ঐতিহ্য রক্ষার জন্য লোকসান দিয়ে আজও বাবার তাঁত মেশিনে গামছা বুনেন গণি মিয়ার ছেলে নাসির উদ্দিন মিঞা (৪০)।

নাসির উদ্দিন মিঞা বলেন, ‘বাবার মৃত্যুর পরেও আমি ও আমার মা হালিমা বেগম (৬২) প্রতি সাড়ে ৩ ঘণ্টায় ২টি তাঁতের গামছা তৈরি করতাম। বর্তমানে বৃদ্ধ মা সুতা টানতে পারেন না।’ নাসির জানায়, গামছা প্রতি তাদের খরচ হয় ২৫০ টাকা। যার পাইকারি দর ৩শ টাকা আর খুচরা মূল্য ৩৫০ টাকা। এতো অল্প লাভে এখন টিকে থাকাই দায় হয়ে পড়েছে। পারিশ্রমিক হিসেব মিলাতে গেলে লোকসানই গুনতে হয়। দেশ এবং দেশের বাইরে এখনো ঝালকাঠির গণি মিঞার গামছার চাহিদা আছে কিন্তু পুঁজি সংকট ও লোকবল দুই সমস্যার কারণে উৎপাদন কমে গেছে। ঐতিহ্যকে ধরে রাখতেই এখন তাঁতের গামছা বুনছেন তারা। শহরের অনেক পরিবার কোলকাতায় তাদের স্বজনদের এই গামছা পাঠায়। সেখান থেকেও কিছু অর্ডার আসে আর মহাজনদের কাছেও পাইকারী দরে কিছু গামছা দেয়া হয়।

গণি মিঞার দুর সম্পর্কের আত্মীয় মৃত আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী পারভীন বেগম (৪২) হস্তচালিত তাঁত মেশিনে ১৭ বছর ধরে গামছা বুনেন। একান্ত আলাপে পারভীন বেগম বলেন, ‘তার তাঁত মেশিনটি আকারে ছোট। তাই তার তৈরি গামছার সাইজও একটু ছোটো। তিনি লম্বায় সোয়া চার হাত এবং পানায় (পাশে) আড়াই হাত মাপের গামছা বুনেন। যার পাইকারী দর ২০০ টাকা এবং খুচরা মুল্য ২৫০ টাকা। ৩ সন্তানের জননী পারভীন বেগম হস্তচালিত তাঁত মেশিনে গামছা বুনে গণি মিয়ার ছেলের মাধ্যমে গণি মিয়ার সীল লাগিয়ে বাজারে বিক্রি করে সন্তানদের পড়ালেখা করান।’

তাঁতশিল্প রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি এসব তাঁত শিল্পীদের|

স্থানীয়রা বলেন, একসময়য়ে সারা দিন-রাত খটাস খটাস শব্দ হতো বাসন্ডার তাঁতী পল্লীতে। গনি মিয়ার বাড়িসহ আশপাশের বাড়িগুলোতে মহাজনদের ভীর লেগেই থাকতো। বাসন্ডা এলাকার লালমিয়া (৫৮) বলেন, গামছা ক্রয়ের সিরিয়াল আগে পাওয়ার জন্য তাঁতীদেরকে সুতা কেনা বাবদ অগ্রীম টাকা দিয়ে যেতো মহাজনরা। তাঁতী বাড়ির যৌবন কমলেও তবে এখনো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গামছা কিনতে গণি মিয়ার বাড়িতে অনেক মানুষ আসেন।

স্থানীয় নুরুল ইসলাম মিঞা (৭০) বলেন, গণি মিয়ার ছেলে নাসির এবং আনোয়ারের স্ত্রী পারভীন বেগমের মতো জেলার অন্য ৩টি উপজেলায় এখনো ১০ থেকে ১৫টি পরিবার এ তাঁত শিল্পকে আঁকড়ে আছে। অসাধু এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা মেশিনের তৈরি গামছায় ঝালকাঠির তাঁতের গামছার লেভেল নকল করেও বাজারজাত করছে। ফলে তাঁতে তৈরি প্রকৃত গামছা ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। দেশে এখন জাপানী অটো তাঁত মেশিনে গামছা বুনানো হয়। আর তাই হস্তচালিত তাঁত মেশিনে উৎপাদন করে খরচ পুষে না।

তাঁত বোর্ডের নতুন চেয়ারম্যান রেজাউল করিম
ব্যবসায়ী জানে আলম জনি বলেন, ‘এখনো সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ঝালকাঠিতে সফরে আসলে তাদেরকে শীতল পাটি এবং গণি মিয়ার গামছা উপহার দেয়া হয়। প্রবাসী সন্তানদের জন্য এই গামছা এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠায় তাদের মা/বাবারা। আমি জাপানে অনেক গামছা উপহার হিসেবে পাঠিয়েছি। গনি মিঞার গামছা আমাদের ঝালকাঠির ইতিহাসের মাইল ফলক।

ঝালকাঠির তাঁত কারিকররা জানান, হস্তচালিত একটি তাঁত চালিয়ে প্রতিদিন দুটির বেশি গামছা তৈরি করা সম্ভব হয় না। ৪০ জোড়া নিয়ে এক বান্ডেল সুতা বরিশালের মহাজনের দোকান থেকে ২ হাজার টাকায় কিনতে হয়। এক বান্ডেল সুতা দিয়ে একবারে একটি তাঁতে তানা হুজের জন্য ৬ বান্ডেল সুতা দরকার হয়। এ দিয়ে সর্বোচ্চ দেড়শ পিস গামছা তৈরি করা যায়। এ গামছার সাইজ ২ থেকে ৩ হাত। প্রতিটি গামছা তৈরির মজুরি পড়ে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। সুতা ও মজুরি নিয়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে বিক্রি আসে সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার টাকা। দুই মাসে এ দশ হাজার টাকা আয় দিয়ে বর্তমান বাজারে একটি পরিবার চলানো অসম্ভব।

এ ব্যাপারে কথা হয় ঝালকাঠি চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আলহাজ সালাহ উদ্দীন আহমেদ সালেকের সঙ্গে। তিনি বলেন, গামছা ঝালকাঠির একটি শিল্প। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের চেষ্টা থাকবে। সংসদ সদস্য আমির হোসেন আমুর নির্দেশ রয়েছে কোনো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কোনো ব্যাংক কিংবা বিসিকে ঋণের আবেদন করলে তাকে ঋণ দেওয়ার জন্য। আমাদের কাছে কেউ এলে চেম্বারের পক্ষ থেকে তাদের সহযোগীতা করা হবে।

জেলা প্রশাসক ও জেলা মেজিস্ট্রেট মো. জোহর আলী বলেন, ‘কালের বিবর্তনে এ শিল্প হারিয়ে যেতে বসেছে। মাত্র কয়েকটি পরিবার এটাকে ধরে রেখেছে তবে আর্থিক সমস্যার জন্য তাদের এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তাই তারা যাতে বিসিক ও ব্যাংক থেকে দ্রুত ও অল্প সুদে লোন পায় তার ব্যবস্থা করবো যাতে এই ঐতিহ্যবাহী ঝালকাঠির তাঁত শিল্পের গামছাটাকে অন্তত ধরে রাখা যায়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category