বরগুনার বেতাগীতে দু-দুবার পুলিশে চাকরির পরীক্ষায় টিকে গিয়েও বাল্যবিয়ের অজুহাতে চাকরি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মুক্তিযোদ্ধার নাতনী শিক্ষার্থী তৈয়বুন্নেছা তুলি। সোনার হরিণ চাকরি না মেলায় শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারটি চরম হতাশায় ভুগছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, তুলি বেতাগী সদর ইউনিয়নের কেওড়াবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. তোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে। বর্তমানে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের সম্মান চূড়ান্ত বর্ষের শিক্ষার্থী। দাদা মৃত সৈয়দ আলী সেনাবাহিনীর আবসরপ্রাপ্ত চাকুরে ও বীর মুক্তিযোদ্ধা (গেজেট নম্বর-৮১৩)। অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় তুলির বিয়ে হয়। বাল্যবিয়ে এক ভয়ংকর অভিশাপ, পরিবার তা বুঝতে পেরে কিছু দিন যেতে না যেতেই বিয়ে ভেঙে যায়।
নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অপরিণত বয়সে বিয়ে চরম অপরাধ। তাই কাবিন তো দুরের কথা, এ বিয়ের কোনো প্রমাণাদিও নেই। বরপক্ষেরও বিয়ে নিয়ে কোনো ধরনের দাবি কিংবা অভিযোগও নেই। তবুও শেষ রক্ষা হয়নি। এ অজুহাতে পুলিশ ভেরিফিকেশনে প্রার্থীর বিয়ে হয়েছে বলে তথ্য দেওয়ায় বাল্যবিয়ের ফাঁদে আটকে ফেঁসে গেছে মুক্তিযোদ্ধার নাতনী এই শিক্ষার্থীর জীবন।
জানা গেছে, বরগুনা জেলায় ২০১৫ সালের ৭ নভেম্বর এবং ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত সৈয়দ আলী তৈয়বুন্নেছা তুলি দু’বার উত্তীর্ণ হয়ে নারী কনস্টেবল পদে চূড়ান্ত হন। কিন্ত পুলিশ ভেরিফিকেশনে শিক্ষার্থী তৈয়বুন্নেছা তুলি বিবাহিত বলে বরগুনা পুলিশ সুপারের নিকট তথ্য দেওয়ায় এ বিয়ের অজুহাতে নারী কনস্টেবল পদে তার ভর্তি বাতিল হয়।
চাকুরীপ্রার্থী শিক্ষার্থী তৈয়বুন্নেছা তুলির বাবা মো. তোফাজ্জেল হোসেন অভিযোগ করেন, বাল্যবিয়ের কথা বলার পরেও অজ্ঞাত কারণে ভেরিফিকেশনের দায়িত্বে থাকা পুলিশের তৎকালীন কর্মকর্তারা বিয়ের কথা উল্লেখ করে পুলিশ সুপারের কাছে তথ্য জমা দেন। যদিও ভেরিফিকেশনের তথ্যে তার মেয়ের বিয়ের কোনো প্রমাণাদিও সংযুক্ত করতে পারেনি। আমি গরীব মানুষ যার কারণে আমার পরিবার ও মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়েও কর্তৃপক্ষের কাছে সেই সময় মিনতি জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
চাকরিবঞ্চিত নারী প্রার্থী বিএম কলেজে পড়ুয়া শিক্ষার্থী তৈয়বুন্নেছা তুলি জানান, সরকার চাইলে এখনও সব কিছুই পারেন। একজন মুক্তিযোদ্ধার নাতনী হিসেবে দেশের সেবা ও আমার বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণের জন্য চাকরিটা পেতে চাই।