ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর নাব্য সঙ্কট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বালাসী-বাহাদুরাবাদ, তিস্তামুখ-বাহাদুরাবাদঘাট রুটে নাব্যতা সংকটে নদের বিভিন্ন নৌ-রুটগুলোতে জমেছে বড় ধরনের বালুর স্তর। দুই নদ-নদী জুড়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় দুই শতাধিক চর ও ডুবোচর। বিভিন্ন পয়েন্টে আটকে যাচ্ছে যাত্রী ও পণ্যবাহী ইঞ্জিনচালিত নৌকা। আবার পায়ে হেঁটে নদী পারাপার হচ্ছে চরাঞ্চলের মানুষজন। প্রতি বছর খনন না করার কারণে নদ-নদীতে এই নাব্য-সংকট দেখা দেয়। ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৫টি নৌঘাট ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পূর্ব চ্যানেল জিগাবাড়ি থেকে মইন্যা এবং পশ্চিম চ্যানেল কামারজানি নৌ বন্দর থেকে জামিরা পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ৫০ কিলোমিটার নদী জুড়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় দুই শতাধিক চর ও ডুবোচর। ফলে গত এক সপ্তাহ ধরে ফুলছড়ি উপজেলার অভ্যন্তরীণ নৌ-রুট ফুলছড়ি-বালাসী, তিস্তামুখঘাট-বাহাদুরাবাদ, গজারিয়া-গলনা, সিংড়িয়া-ঝানঝাইর, গুনভরি-কালাসোনা, গজারিয়া-ফুলছড়ি এবং আন্তঃজেলা নৌ-রুট ফুলছড়িঘাট-গুঠাইল, সৈয়দপুর-রাজিবপুর, তিস্তামুখঘাট-আমতলী এবং তিস্তামুখঘাট-সারিয়াকান্দি নৌ-রুটে নৌকা চলাচল বন্ধ হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদে নাব্য সংকটের কারণে তিস্তামুখ-বালাসীঘাট থেকে রৌমারী, চিলমারী, সানন্দাবাড়ী, সারিয়াকান্দি, সাঘাটাসহ ২৫টি নৌরুট ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানালেন তিস্তামুখ নৌঘাটের ইজাদার শাহজাহান মিয়া। তিনি বলেন, নদী পথে ঘুরে ঘুরে নৌকা চলাচল করায় সময় লাগছে বেশি। বিভিন্ন রুটে নৌকা চলাচল বন্ধ থাকায় লোকসান গুনতে হবে। নৌকার মাঝি জসিজল মিয়া জানান, ফুলছড়ির তিস্তামুখঘাট থেকে বর্ষা মৌসুমে বাহাদুরাবাদ ঘাটে যাত্রী নিয়ে পৌঁছতে সময় লাগতো ২ ঘণ্টা, নদের বিভিন্ন স্থানে চর জেগে ওঠায় এখন সময় লাগছে বেশি। তারপর চরে নৌকা আটকে গেলে ৩-৪ ঘণ্টা সময় পার হচ্ছে। এ কারণে আমরা নৌকা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। বালাসীঘাটের নৌকার মালিক আজিবর হোসেন জানান, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই নদীর নাব্য সংকট চরমে উঠেছে। ফলে বন্ধ হয়ে যায় নৌ চলাচল। এবারও একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে পানি না থাকায় অনেক বেশি পথ ঘুরে নৌকাগুলোকে গন্তব্যে পৌঁছতে হচ্ছে। এতে ইঞ্জিনের তেল খরচ ও সময় দু’টোই ব্যয় হচ্ছে বেশি।
ফুলছড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর গফুর মন্ডল জানান, বর্তমানে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাওয়ায় নদী বুকে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর-ডুবোচর। এখন নদীতে পানি একেবারেই কমে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় ডোবার মতো হয়ে আছে। বর্ষা মৌসুম না আসা পর্যন্ত এগুলোর পরিবর্তন হবে না। তিনি আরও জানান, যেখানে নদীতে বড় বড় ঢেউ থাকার কথা, সেখানে জেগে উঠেছে বালু চর। খনন না করায় নদীর এ অবস্থা হয়েছে। ফলে অর্ধেকেরও বেশি রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
ফুলছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজ জানান, এ দু’নদে নাব্যতা সংকট কমাতে গেলে দ্রুত ড্রেজিং করা প্রয়োজন। নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আসলে এ অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে দুর্ভোগ কমে আসবে। নদী সঠিকভাবে ড্রেজিং করে নাব্য ঠিক রাখলে নৌকা ব্যবসায়ীরা টিকে থাকতে পারবে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল মতিন জানান, নদী খনন করে নাব্য সংকট দূর করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক লোকজন চরে বসবাস করে। ২৫৬টি চর অঞ্চলে প্রায় ৪ লাখ লোক বসবাস করে। বিভিন্ন ফসল উৎপাদন হয়। এসব ফসল বাজারজাত করার ক্ষেত্রে দ্রুত ড্রেজিং প্রয়োজন। বিআইডব্লিউটিএ নদী খননে একপি প্রজেক্ট নিয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে সমাধান হবেন।
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান: মোঃ শফিউল ইসলাম শফিক; সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মোস্তফা রুমি, এলএল.বি(অনার্স), এলএল.এম, 01715672097; জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিবন্ধন প্রক্রিয়াধীন।)
কপিরাইট © ২০২২ swadeshkonthoprotidin এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।