আন্তর্জাতিক জেনোসাইড (গণহত্যা) দিবসের তাৎপর্য ও একাওুরে বাংলাদেশে সংঘঠিত জেনোসাইড (গণহত্যা)’র আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি” শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা গত ৯ ডিসেম্বর নিউইয়কের জ্যাকসন হাইটসে অনুষ্ঠান হয়।সভায় সভাপতিত্ব করেন জেনোসাইড ’৭১ ফাউন্ডেশন এর সভাপতি ডঃ প্রদীপ রঞ্জন কর এবং সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের সাধারন সম্পাদক মনজুর চৌধুরী । খবর বাপসনিঊজ।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে আলোচনা অংশগ্রহণ করেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনোয়ার হোসেন, বিশেষ অতিথি হিসেবে নিউইয়র্ক স্টেট নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেসিকা গঞ্জালেস রোজাস, অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার, নিউইয়র্কের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান, বাংলাদেশ মিশনের প্রথম সেক্রেটারী (প্রেস) নূরে এলাহী মিনা, প্রবীণ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, ডেমোক্র্যাট লিডার মুর্শেদ আলাম, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামীলীগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহিম বাদশা,দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী, আইন সম্পাদক এডভোকেট শাহ মো: বখতিয়ার, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট উত্তর আমেরিকার সভাপতি মিথুন আহমেদ, চলচ্চিত্র নির্মাতা বাশিরুল হক বিল্টু, নিউ আমেরিকান ডেমোক্রেটিক ইউথ ক্লাবের সভাপতি আহনাফ আলম।
অনুষ্ঠানে দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের উপ-স্থায়ী প্রতিনিধি ড. মনোয়ার হোসেন ।
ড: প্রদীপ রঞ্জন কর বলেন এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল গণহত্যা বিষয়ক প্রথাটির ব্যাপারে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং গণহত্যায় মৃত ব্যক্তিদের স্মরণ ও সম্মান করা। এটি জাতিসংঘের প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রকে এও স্মরণ করিয়ে দেয় যে তাদের নিজ জনগণকে গণহত্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য দায়িত্ব আছে। গণহত্যার উস্কানি বন্ধ করা ও গণহত্যা ঘটলে তা প্রতিরোধ করা এই দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এই দিনে সারা বিশ্বে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর’ পালিত হয় । ২০১৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ এ দিনটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস হিসাবে ঘোষণা করে ৷ জাতিসংঘ দিবসটি ঘোষণার পর থেকেই জেনোসাইড ’৭১ ফাউণ্ডেশন, ইউএসএ প্রতি বছর দিনটি পালন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকাতায় আজকের এই অনুষ্ঠান।১৯৪৯ সালের ৯ই ডিসেম্বরে প্রথমবারের মত জাতিসংঘে গণহত্যা প্রতিরোধ ও এ সংক্রান্ত শাস্তি বিষয়ক প্রথাটি (convention) গৃহীত হয়।
তিনি আরো বলেন ১৯৭০ সালের পাকিস্তান সাধারণ নির্বাচনের রায়কে অস্বীকার করা, বিজয়ী বাঙ্গালীদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা এবং বাঙালীর স্বাধীনতার দাবিকে চিরতরে ধ্বংস করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী পরিকল্পিতভাবে গনহত্যা চালায়। হত্যা করে ৩০ লক্ষ নীরিহ বাঙালী, নির্যাতন, ধর্ষণ করে ২-৪ লক্ষ বাঙ্গালী নারী। নারী ধর্ষণ ব্যবহৃত হয় যুদ্ধের অস্ত্র হিসাবে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন দলিলপত্রেও বলা হয়েছে যে স্মরণকালের ইতিহাসে নৃশংসতম গণহত্যার একটি হলো ১৯৭১ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের জেনোসাইড। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীগের চালানো জেনোসাইড (গণহত্যা) সবচেয়ে বড় ও ইতিহাসের জঘন্যতম জেনোসাইড। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে’ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অথিতিবৃন্দ ও বক্তারা আলোচনায় অংশগ্রহন করে বলেন, বাংলাদেশের
মুক্তিযুদ্ধে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পাশবিক নির্যাতন, নির্বিচারে গনহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ করে বাঙালী জাতিকে নিশ্চিহ্ন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। ২৫শে মার্চের কালোরাতে অপারেশন সার্চলাইটের নামে নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর ঝাঁপিয়ে পরে এবং দীর্ঘ নয় মাসে ৩০ লক্ষ শহীদ ও ২ -৪ লক্ষাধিক মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। পৃথিবীতে স্বাধীনতার জন্যে কোন দেশ এত ত্যাগ স্বীকার করেনি।
দীর্ঘ ৫০ বছর অতিবাহিত হলেও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের এই গনহত্যাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এত রক্তক্ষয়ের পরও কেন এটাকে গনহত্যা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না সেমিনারে বক্তারা তার করনীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেণ এবং সুনির্দিষ্টরূপে কিছু প্রস্তাবনা উত্থাপন করে তা বাস্তবায়নের জন্যে পদক্ষেপ গ্রহনে বাংলাদেশ সরকার ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের একসাথে কাজ করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে আলোচনায় আরও অংশগ্রহন করেন যুক্তরাষ্ট্র জাসদের সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম জিক,যুক্তরাষ্ট্র শেখ হাসিনা মঞ্চের সভাপতি জালাল উদ্দিন জলিল, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুমানা আক্তার , জলি কর, নিউইয়র্ক মহানগর যুবলীগের সভাপতি খন্দকার জাহিদুল ইসলাম , যুক্তরাষ্ট্র ছাএলীগের সাবেক সহ সভাপতি শহিদুল ইসলাম , গণজাগরণ মঞ্চের গোলাম রনী, সৈয়দ জুয়েল , ফাতিন শাহ, অমিত, পলাশ এডওয়ার্ড প্রমুখ।
পরে বাংলাদেশে ‘৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্থান হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসর রাজাকার- আলবদর-আলসামস দ্বারা সংঘটিত জেনোসাইডের উপর ডকুমেণ্টারী
“CRY FOR JUSTICE” প্রদর্শিত হয়।