নবান্ন’ শব্দের অর্থ ‘নতুন অন্ন’ । আর নবান্ন উৎসব হলো নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুতকৃত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমণ ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। … নবান্ন উৎসবে নতুন চালের তৈরি খাদ্যসামগ্রী কাককে নিবেদন করা একটি বিশেষ লৌকিক প্রথা। মাঠে মাঠে সোনালী ধানের সমারোহ, বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। ফলন যেমনই হোক, কৃষকের মুখে ধানকাটার গান মনে করিয়ে দেয় নবান্ন উৎসবের কথা।
নবান্ন উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি। নতুন ধান কাটা আর সেই ধানের প্রথম অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে পালিত হয় নবান্ন উৎসব। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরও গাঢ় করার উৎসব। হেমন্ত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি ছেয়ে যায় সোনালি ধানের ক্ষেত। পাকা ধানের সোনালি রঙ দেখে কৃষকের মন ভরে যায় আনন্দে। কারণ, কৃষকের গোলা ভরে উঠবে ধানে। বছর ঘুরে আবার এসেছে অগ্রহায়ণ।
স্মরণাতীত কাল থেকে বাঙালির জীবনে পয়লা অগ্রহায়ণকে বলা হয়ে থাকে বার্ষিক সুদিন। এ দিনকে বলা হয় নবান্ন। নবান্ন হচ্ছে হেমন্তের প্রাণ। কিন্তু বিশ্বায়নের এই যুগে বাংলার ঐতিহ্যগুলো ক্রমশ হারিয়ে যেতে বসেছে। তবুও নতুন ধানের মুহুমুহু গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও জেলার প্রতিটি এলাকা ও মহল্লাজুড়ে। নতুন ধানের চালে পিঠা তৈরীর হিড়িক পড়েছে ঘরে ঘরে। এরই ফাঁকে প্রত্যান্ত এলাকাতে দেখা দিয়েছে নবান্নের আমেজ। মজাদার পিঠার আনন্দ চলছে প্রায় পরিবারে। কয়েকদিন ধরে নতুন ধানের চাল পিষিয়ে ভাপা সহ হরেক রকমের পিঠাপুলি তৈরী করে যাচ্ছেন গৃহবধুরা।
গ্রামাঞ্চল জুড়ে নতুন চাল দিয়ে পিঠা পুলি পায়েশ-পোলাও আর নতুন চালের আটা গুড়সহ কলা দিয়ে সিরনি তৈরী করে আত্মীয় স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীদের নিয়ে খাবার ধুম। নবান্ন ছাড়া কনকনে শীতে প্রত্যন্ত এলাকার বহুজন নতুন চাল দিয়ে হরেক রকমের পিঠা তৈরী করে শীত পিঠার আয়োজনও করে। বাঙালি জাতির ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব চিরকাল বহমান হয়ে থাকুক এদেশের মানুষের হৃদয়ে ।