ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান সেতু থেকে রাজাপুরের মেডিকেল মোড় পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কে শতবর্ষী গাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির ৬৬৪টি গাছ কাটা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক গাছ কাটা হয়ে গেছে। তবে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সড়কের পাশ ঘেঁষে মাটি খুঁড়ে গাছের শিকড় উপড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এতে মূল সড়ক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিপ টিম্বার ট্রেডার্সের মালিক শান্ত কুমার বাড়ৈ বলেন, দরপত্রের নির্দেশনা অনুসারে তাঁরা গাছ কেটে নিচ্ছেন। এতে সড়কের কোনো ক্ষতি হবে না। গাছগুলো কাটার ফলে অনেকে যানবাহন দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
সম্প্রতি সরেজমিনে রাজাপুর পিংরী এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকেরা প্রাচীন রেইনট্রি নামে একটি গাছ কেটে একাধিক খণ্ডে ভাগ করে রেখেছেন। গাছ কাটার কারণে সড়করে দুই পাশে গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হয়েছে। মাটি খুঁড়ে শ্রমিকেরা গাছের গোড়া ও শিকড়ও তুলে নিচ্ছেন।
উপজেলা সদরের ছত্রকান্দা এলাকার কৃষক আমজেদ আলী বলেন, ‘সড়কের দুই পাশের গাছ কেটে অক্সিজেন কারখানা ধ্বংস করা হচ্ছে। গাছগুলোর সঙ্গে আমাদের পূর্বপুরুষদের স্মৃতি আছে।’
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাঁচ মাস আগে ঢাকায় সড়ক ও জনপদ কার্যালয়ে দরপত্রের মাধ্যমে ঝালকাঠি-রাজাপুর আঞ্চলিক সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশে ৬৬৪টি গাছ ৭১ লাখ ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। গড়ে প্রতিটি গাছের দাম পড়ে ১০ হাজার ৭০০ টাকা। আলাদা লটে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান গাছগুলো ক্রয় করে। সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাঁরা সম্প্রতি এ গাছগুলো কাটা শুরু করেন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো হলো—ডিপ টিম্বার ট্রেডার্স, রাব্বি এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স টিঅ্যান্ডটি এন্টারপ্রাইজ, কাজী এন্টারপ্রাইজ ও মুরাদ এন্টারপ্রাইজ।
অবসরপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষক ও রাজাপুর উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. শাহজাহান মোল্লা বলেন, সড়কের দুই পাশের গাছগুলো ছিল এই উপজেলার মানুষের সবুজ বেষ্টনী। সিডরসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব গাছ তাঁদের রক্ষা করেছে। নির্বিচারে গাছ কেটে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট করছে। এতে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নাবিল হোসেন বলেন, সড়কের দুই পাশের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো কাটার জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ চালক ও বাসমালিকদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। সড়কের বিভিন্ন বাঁকে গাছের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা হতো। সব পরিষ্কার হলে সড়কের দুই ধারে আবার পরিকল্পিতভাবে আকাশমণিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানো হবে।