সাবেক এক পুলিশ পরিদর্শকের স্ত্রী মাহমুদা খানম স্বপ্নার ৪ বছরের কারাদণ্ড এবং অবৈধ উপায়ে অর্জিত ২১ লাখ ৫৪ হাজার ২৩৫ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলায় আজ মঙ্গলবার ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদলতের বিচারক শেখ হাফিজুর রহমান এ রায় ঘোষণা করেন।

রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।

চার বছর কারাদণ্ডের মধ্যে ২০০৪ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের ২৬ (২) ধারায় ১ বছর কারাদণ্ড এবং ২৭ (১) ধারায় ৩ বছরের আদেশ দিয়েছেন আদালত। দণ্ডিত মাহমুদা খানম স্বপ্না সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর মোস্তাফিজুর রহমানের খানের স্ত্রী। তাদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার সদর থানার রাজপাশা গ্রামে।

২০১৬ সালে রাজধানীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন দুদকের উপ-পরিচালক আবু বকর সিদ্দিক। মামলাটি তদন্ত শেষে ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট জমা দেন দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি মিসেস মাহমুদা খানম স্বপ্না ২০১৫ সালের ১৪ মে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ১৮৩ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে এবং অর্জিত ১ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার ৪৫ টাকার সম্পদের মধ্যে ৪১ লাখ ৪১ হাজার ২৬৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক দখলে রেখে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় শাস্তিযােগ্য অপরাধ সংঘটন করেছেন।

মামলায় আরও বলা হয়, মাহমুদা খানম স্বপ্না একজন গৃহিণী। তার স্বামী মােস্তাফিজুর রহমান একজন পুলিশ পরিদর্শক ছিলেন। তিনি নিজ নামে সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়, গুলশান, ঢাকায় ২০০৫ সালের ২৪ মার্চ রেজিস্ট্রীকৃত সাফ কবলা দলিলের উত্তরা আবাসিক এলাকার ১৪নং সেক্টরের ১৮ নং রাস্তার ৩৮নং প্লটে ৩ কাঠা জমি ক্রয় করেন। যার ক্রয় মূল্য ৬ লাখ ৮২ হাজার টাকা। উক্ত জমিতে তিনি প্রতি তলা ১৭৪৬.২৫ বর্গ ফুট আয়তনের ৭ (সাত) তলা বাড়ি নির্মাণ করেন।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলীদের মাধ্যমে সরেজমিনে বাড়ীটির পরিমাপ গ্রহণ করে নির্মাণ ব্যয় ১ কোটি ৬১ লাখ ১২ হাজার ১৮৩ টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু আসামি দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে বাড়িটির নির্মাণ ব্যয় প্রদর্শন করেছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ ক্ষেত্রে তিনি সম্পদ বিবরণীতে গোপন করেছেন ১৭ লাখ ৬২ হাজার ১৮৩ টাকা।

এ ছাড়া তিনি আসবাবপত্র ৯৮ হাজার ৫০০ টাকা, ব্যবসার পুঁজি ১ লাখ ৯২ হাজার ৩৩৬ টাকা ও নগদ অর্থ ১ হাজার ৮০২ টাকাসহ মোট ৩ লাখ ৮ হাজার ৮৬২ টাকার অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেন। এতে তার অর্জিত সম্পদের মূল্য দাঁড়ায় ১ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার ৪৫ টাকা। উক্ত সম্পদ অর্জনের বিপরীতে তিনি ২০১০-১১ করবর্ষ হতে ২০১৪-১৫ করবর্ষ পর্যন্ত ব্যবসার আয়, স্বর্ণালংকার বিক্রি, ব্যাংক ঋণ, জমি বিক্রি, গৃহ সম্পত্তির আয় ও অন্যান্য উৎস হতে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৯৬ হাজার ৭২৬ টাকা আয় প্রদর্শন করেন। যার মধ্যে তার পারিবারিক ব্যয় রয়েছে ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। ফলে পারিবারিক ব্যয় বাদে তার সম্পদের পরিবৃদ্ধি থাকে ১ কোটি ২৯ লাখ ৬১ হাজার ৭৭৬ টাকা।

পক্ষান্তরে, তার অর্জিত সম্পদের মূল্য ১ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার ৪৫ টাকা। অর্থাৎ তার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মূল্য ৪১ লাখ ৪১ হাজার ২৬৯ টাকা। এভাবে তিনি সম্পদ বিবরণীতে ১৭ লাখ ৬২ হাজার ১৮৩ টাকার সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করে ও ৪১ লাখ ৪১ হাজার ২৬৯ টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনপূর্বক দখলে রেখেছেন।