
কাজী মোস্তফা রুমি: আজ বোধন। শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিন্দ্রা ভাঙ্গার জন্য বন্দনা পুজা করা হবে। মন্ডপে-মন্দিরে আজ মঙ্গলবার পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এই বন্দনা পুজা অনুষ্ঠিত হবে। কাল বুধবার ষষ্ঠীপুজার মধ্যে দিয়ে সূচনা ঘটবে পাঁচদিনব্যাপী বাঙালি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ শারদীয় দুর্গোৎসব।
বোধন দুর্গাপূজার অন্যতম একটি আচার। বোধন শব্দের অর্থ জাগরণ বা চৈতন্যপ্রাপ্ত। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। শরৎকালের দুর্গাপূজায় এই বোধন করার বিধান রয়েছে। বিভিন্ন পূরাণ অনুসারে ভগবান রামচন্দ্র শরৎকালে রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার উদ্দেশ্যে দুর্গাপূজা করেন। তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামেও খ্যাত। তবে বসন্তকালে চৈত্র মাসে যে দুর্গাপূজা তথা বাসন্তীপূজা অনুষ্ঠিত হয়, তাতে বোধন করার প্রয়োজন হয় না।
আজ বোধন শেষে আগামীকাল বুধবার থেকে মহাষষ্ঠীতে ষষ্ঠীবিহিত পূজা, আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে দুর্গাপূজা। পাঁচদিনের এই উৎসব শেষ হবে আগামী ১৩ অক্টোবর রবিবার বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে।
বছর ঘুরে আবার এসে গেল দেবী পক্ষ। সারাদেশে হাজারো মন্ডপে নিখুঁত তুলির আঁচড়ে ফুঠে উঠেছে দেবী দূর্গার অনন্যসুন্দর অভয়াদানকারী রূপ। সারাদেশের ৩২ হাজার ৬৬০টি পুজোমন্ডপে এবার দুর্গাপুজো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে গত বছরের তুলনায় এবার প্রায় এক হাজার মন্ডপে দুর্গাপুজো কম হচ্ছে। আজ সন্ধ্যায় বোধনের সময়ে পুজোমন্ডপে আজ ঢাকে পড়বে কাঠি। সায়ংকালে ধুপের ধোঁয়া, ঢাক-ঢোল আর কাঁসর-মন্দিরার সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজামন্ডপ। বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জায় উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে পুজোমন্ডপগুলো। বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে দেবীদূর্গাকে ভক্তিভরে বরণ করতে সারাদেশের কোটি কোটি হিন্দু নর-নারীরা প্রস্তুত।
রমনা কালি মন্দিরের পুরোহিত জানান, আগামীকাল বুধবার সকাল ৮টা ৪৪ সেকেন্ডের মধ্যে মহাষষ্ঠী কল্পনারম্ভ শেষ করতে হবে। সায়ংকালে দেবীর অধিবাস ও আমন্ত্রণ। পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৫৩ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের মধ্যে দেবীর মহাসপ্তমী পুজা শেষ করতে হবে। ১১ অক্টোবর শুক্রবার সকাল ৬টা ৫২ মিনিটের মধ্যে মহাষ্টমী পুজো এবং ৬টা ৫২ মিনিটে আরস্ত, এরপরেই কুমারী পুজো। পরে ৭টা ৪১ মিনিটের মধ্যে সন্ধী পুজো শেষ করতে হবে। ওইদিনই সকাল ৭টা ৪১ মিনিট পর মহানবমী আরস্ত ও ৯টা ৫৭ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত পুজো শেষ করতে হবে। ১২ অক্টোবর শনিবার ৬টা ১২ মিনিটের মধ্যে মহানবমীর বিহিত অধিক পুজো শেষ করতে হবে। একই দিন সকাল ৭টা ৩৭ মিনিট গতে পূর্বাহ্নের মধ্যে দশমী পুজো সমাপন এবং দশমী পুজো সমাপনান্তে বিসর্জন। ১৩ অক্টোবর রবিবার প্রতীমা বিসর্জনের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনব্যাপী শারদোৎসব। দেবী দুর্গা এবার ধরণীতে আসছেন দোলায় চড়ে। ফিরবেন ঘোটকে করে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে সারাদেশের পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এবারের দুর্গাপূজা ঘিরে ব্যাপক তৎপর রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই উৎসব উপলক্ষে দেশজুড়ে পূজামণ্ডপ গুলোতে থাকবে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। আসন্ন দুর্গাপূজায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইতোমধ্যে মাঠ প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনাও জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
প্রতিটি মন্ডপ ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিরাপত্তা বলয়। এছাড়া প্রতিটি মণ্ডপে পূজা চলাকালে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তায় পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও ভিডিপি, র্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচ্চ পর্যায় থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে এবার সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে মাঠপর্যায়ে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি চলছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর। যে কোনো গুজব প্রতিরোধে নজর রাখা হচ্ছে সাইবার স্পেসেও। এরপরও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকবে সোয়াট, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, র্যাবের হেলিকপ্টারসহ স্ট্রাইকিং ফোর্স। গুরুত্বপূর্ণ মন্দিরগুলোর প্রবেশপথে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টরের মাধ্যমে তল্লাশি করা হবে। প্রয়োজনে পুরো এলাকা সুইপিং করবে ডগ স্কোয়াড ইউনিট।