এমনই সময় একদিন –
আষাঢ়ের দুপুরে খসখসে উর্দি পরে
ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কিছুটা উত্তরে
ফাঁকা মাঠ পারি দিয়ে তারপর যে গ্রাম
দানব সিপাহী হানা দিল চানপুর তার নাম।
চারদিকে বর্ষার পানি থৈ থৈ
কোথাও কোনো জনমানব নাই – নাই কেউ
মুক্তিকামী যুবক প্রশিক্ষণে চলে গেছে উত্তরে
প্রান্তরে প্রান্তরে লেগে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ঢেউ।
কিন্তু হায় -দৈত্যের থাবায় মানচিত্র ভেসে যায়
বাঁচতে চেয়ে ডুব দিয়ে ছিল কচুরিপনার তলে
তবুও তার রক্ষা হল না জাল ফেলে জলে-
নিয়ে এলো ধরে বাঁধে শক্ত করে দড়ি দিয়ে নিয়ে যায়-
কাছেই মসজিদের পিছে বুড়ো আম গাছটির তলায়।
মা চাচিরা রাইফেলের মুখে দাঁড়ায়ে থাকে কাছে
কোন কথা নাই কারো মুখে চোখের কোণে আগুন জ্বলে
বিষণ্ণ আকাশ নীরব চারপাশ রক্তাক্ত হলো গাছের পাতা দূর্বাঘাস
কিশোরী কুমারী জীবন হ’ল বিসর্জন গাছের তলে ঢেঁকি ঘরে।
নয় জন দানবের জন্য -শুধু একজন
আকাশ আস্তে আস্তে নীল হয়ে গেল থামলো না রক্তক্ষরণ।
ওরা চলে গেল -যাওয়ার সময় বলে গেল –
কাওকে কিছু বলা যাবে না –
গাঁয়ের ইমাম সাহেব এসে খুউব করে শাসিয়ে গেল –
” মুসলমান মুসলমানের ভাই
ভাইয়েরা এসেছে শুধু পাকিস্তানকে রক্ষা করতে
সংসার নিয়ে তো এদেশে আসে নাই
যুদ্ধ কালিন সময়ে এমনটি হয়েই থাকে। ”
কাওকে কিছু বলা হ’ল না -কাউকে কিছু বলা গেল না
আঁধারে ঢেকে রইল দুপুরের ধোঁয়াটে কাহিনী,
কিশোরীর মৃত্যু হলো -কেউ আর জানতে পারেনি
সেদিনের সেই রক্তক্ষরণ আর জীবনদানের কথা।
অতঃপর
সে দিনের সেই দৃশ্য দেখে শুয়ে ছিল মা -বিছানায়
আজও বেঁচে আছে শুয়ে শুয়ে মুখে নাই কোন কথা
ধর্ষিতার পরিবারের কাছে আজ নিরত্তোর স্বাধীনতা।
রাতের পর দিন স্বাক্ষরহীন গেল পঁয়তাল্লিশ বছর
স্মৃতি নাই স্মরণ নাই মাটিতে মিশে আছে ধর্ষিতার কবর।
কখনো কখনো ধর্ষিতার অনুজন হান্নানের সাথে
আমার দেখা হয় কলমাকান্দা বাজারের পথে
মনে হয় বহুবছর বহুবার ওরা খুন হয়ে ছিল
এই বাংলায় যুগে যুগে দানব শাসকের হাতে
রক্তজলে ছিনিয়ে আনতে মাতৃভূমির স্বাধীনতা
প্রান্তরে প্রান্তরে ওরা জন্ম নিয়ে ছিল -শুধু রক্ত দিতে।
অথচঃ কী করে কার মৃত্যু হ’ল কেনো মৃত্যু হ’ল সেই রক্তক্ষয় অধ্যায়
সেই সব স্মরণীয় কাহিনী আলো থেকে আঁধারে
মনে হয় আজ আর কারো মনে নাই
প্রয়োজনিয় খুঁজ খবর নেয় নাই -সমাজ রাষ্ট্র ও অজির্ত স্বাধীনতায়।
মঞ্জুরুল হক তারা
কলমাকান্দা -নেত্রকোণা
রচনাকাল -২৪ –১–১৮ খৃঃ