নোয়াখালীবাসী দীর্ঘ তিন দশক ধরে বিভাগের দাবীতে আন্দোলন করে আসছে। ইতোমধ্যে একক বৃহত্তম জেলা সিলেট, বরিশাল, বৃহত্তর ময়মনসিংহ এর খন্ডিত অংশ নিয়ে বিভাগ গঠন করা হলেও ইতিহাস- ঐতিহ্য, ভাষা সংস্কৃতিতে স্বতন্ত্র নোয়াখালীকে বিভাগে রূপান্তর করা হয়নি, বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রতি বৈষম্য বলা চলে। নোয়াখালীর সন্তানরা দেশের শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি ও রাজধানীতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে সুদীর্ঘ কাল ধরে৷ প্রবাসী অধ্যুষিত অত্র অঞ্চল দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে গুরুত্বপূর্ণ নেয়ামক।নোয়াখালীর রয়েছে সুপ্রাচীন সাংস্কৃতিকও ভাষাগত ঐতিহ্য। নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায়, অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার চেয়ে বেশি সংখ্যক জনগোষ্ঠী মনেরভাব প্রকাশ করে। নোয়াখালীর ভাষার ব্যপ্তি বৃহত্তর নোয়াখালী তথা লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চট্টগ্রাম জেলার দুইটি উপজেলা সন্দ্বীপ ও মিরেরসরাই ( এক সময় নোয়াখালী জেলার অংশ ছিলো) , কুমিল্লা চাঁদপুরের দক্ষিন অংশ এমনকি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের দক্ষিনের জেলা গুলোও নোয়াখালীর ভাষা ও সংস্কৃতি ধারন করে।বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী ১৭৭২ সালে নোয়াখালীতে কলিন্দা নামে একটি জেলা গঠন করে ; যা পরে ভুলুয়া এবং নোয়াখালী নামে পরিবর্তিত হয়।
নোয়াখালী বিভাগ হলে, এই অঞ্চলের সুবিধা বঞ্চিত কোটি মানুষ নানাভাবে উপকৃত হবে৷ যেমনঃ
★নোয়াখালীর ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবা খাতে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে৷ বিভাগীয় শহর গুলোতে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশেষায়িত হাসপাতাল স্থাপন করা হচ্ছে। তখন জটিল-কঠিন রোগের চিকিৎসা নোয়াখালীতেই পাবে অত্র অঞ্চলের কোটি জনগন। ঢাকা,চট্টগ্রাম দৌড়ঝাপে সময়, অর্থ, স্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে না৷
★ নতুন বিভাগকে কেন্দ্র করে শিক্ষাখাতেও গতিশীলতা আসবে, নতুন নতুন স্কুল, কলেজ, কৃষি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সহ কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্র স্থাপিত হবে৷ যার ফলে অত্র অঞ্চলের মানুষ দক্ষ জনসম্পদে পরিনত হবে। নিজেদের পরিবারের পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে৷ চাকরিপ্রার্থীরা বিসিএস সহ বিভিন্ন চাকরি পরীক্ষা নোয়াখালীতে বসেই অংশগ্রহণ করতে পারবে৷
★ নতুন বিভাগের জন্য পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলা হবে৷ যেখানে পর্যাপ্ত রাস্তাঘাট, বিনোদনকেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন করা হবে।
★ নোয়াখালী উপকূলের জেগে উঠা ভূমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি ও শিল্পের প্রসার হবে৷ এসব ফাঁকা ভূমিতে শিল্প নগরী গড়ে তোলা সহজ হবে। ফলে অত্র অঞ্চলের বেকার সমস্যা দূর হবে৷ কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে, দেশের খাদ্যসঙ্কট নিরসন সহজ হবে৷ ৪০০ শত বর্গকিমি আয়তনের স্বর্নদ্বীপ একটি অপার সম্ভাবনার আধার৷ ভাষানচরে একটি অংশে শরনার্থী রোহিঙ্গাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, তেমনি বাকি অংশগুলোতে ভূমিহীন পরিবার গুলোকে পুনর্বাসন সম্ভব৷
★ জেলা ব্র্যন্ডিং এ নোয়াখালী জেলার স্লোগান হচ্ছে- নিঝুমদ্বীপের দেশ নোয়াখালী। বিভাগ গঠন হলে, নিঝুমদ্বীপ কেন্দ্রিক উন্নয়নে নতুন মাত্রা যোগ হবে৷
★ নোয়াখালী বিভাগ গঠিত হলে, নোয়াখালীর সাথে ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ অন্যান্য বিভাগীয় শহরের সাথে সড়ক ও রেল যোগাযোগের উন্নতি হবে৷ প্রবাসী অধ্যুষিত নোয়াখালীতে একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর স্থাপন প্রকল্পের কাজ ত্বরান্বিত হবে। ফলে উপকৃত হবে আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা সেই সাথে উপকুল এলাকায় স্থাপিত ইকোনমিক জোনগুলো ও৷ নতুন বিভাগীয় শহরে বিভিন্ন দেশের ভিসা সেন্টার স্থাপিত হবে৷
নোয়াখালী একটি প্রান্তিক জনপদ। রাজধানী থেকে অপেক্ষাকৃত দূরবর্তী প্রান্তিক জেলাগুলাকে বিভাগে রূপান্তর করে, উন্নয়ন কার্যক্রমে গতিশীলতা আনায়ন করা হয়। যেমনটি দেখা গিয়েছে খুলনা বিভাগ গঠনের ক্ষেত্রে৷ যশোর অপেক্ষাকৃত উন্নত ছিলো, বৃহত্তর খুলনা ও এক সময় যশোর জেলার অংশ ছিল কিন্ত প্রান্তিক জনগনের সুবিধার কথা চিন্তা করে খুলনাকে বিভাগ করা হয়। একইভাবে উত্তরবঙ্গের অপেক্ষাকৃত উন্নত বগুড়াকে বাদ দিয়ে রংপুর কেই বিভাগ করা হয়৷
নোয়াখালী বিভাগের বিপক্ষে অনেকে বিভিন্ন কু যুক্তি দেয়। তার মধ্যে অন্যতম হলো নোয়াখালী অবকাঠামোগত ভাবে উন্নত নয়৷ কোন বিভাগীয় শহর ই অবকাঠামোগত উন্নত থাকে না, বিভাগ হওয়ার পর প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়৷ রংপুর ও ময়মনসিংহ এর বিগত কয়েকবছরের উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে, বিভাগ হওয়ার পূর্ববর্তী সময়ের উন্নয়নের তুলনা করলেই দেখা যাবে৷ বিভাগ হওয়ার পরেই রংপুর, ময়মনসিংহ শহরকে সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তর করা হয়৷ প্রস্তাবিত আরেকটি বিভাগ ফরিদপুরে এখনো একটি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নাই৷ পর্যাপ্ত অবকাঠামোর যুক্তিটির কোন ভিত্তি নেই৷ নোয়াখালীতে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, কৃষি প্রশিক্ষন ইন্সটিটিউট, ম্যটস, শতাব্দী প্রাচীন টেক্সটাইল কলেজ ও পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র৷ স্বর্নদ্বীপে রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম সেনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ভাষানচরে নির্মিত হচ্ছে নৌঘাঁটি। চেয়ারম্যানঘাট এলাকায় স্থাপিত হচ্ছে ‘ শেখ হাসিনা সমুদ্র সম্পদ গবেষণা ইন্সটিটিউট’ যা সমুদ্র সম্পদের যথাযথ ব্যবহারে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। কোম্পানিগঞ্জ ও সুবর্নচরে স্থাপিত হচ্ছে দুইটি ইকোনমিক জোন যা বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরীর অংশ হিসেবে যুক্ত হবে৷ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো একদমই নেই তাও সঠিক নয়৷ নোয়াখালীর ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে ছাত্র যুবক জনতা সবাই এক সাথে বিভাগের দাবীতে সোচ্ছার ভূমিকা রাখতে হবে৷