কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার ফলে ভোগান্তির শিকার পর্যটকরা, সংকীর্ণ হয়ে পরেছে সড়ক, যানচলাচলে হচ্ছে ব্যহত।
কুয়াকাটায় সড়কের পাশে দখলকৃত জমিতে কাঁটাতারের বেড়ার মধ্যে আদালতে চলমান মামলার একটি সতর্কতামুলক বিজ্ঞপ্তি টানানো হয়েছে।
এটি কুয়াকাটা প্রেসক্লাব চত্বরে বাউন্ডারী ওয়ালের মহাসড়ক সংলগ্ন দৈর্ঘ্য প্রায় একশ ফুট। সৈকতে প্রবেশের এটি গুরুত্বপূর্ণ একমাত্র পথ। মহাসড়ক থেকে পূর্বপাশে দশ ফিট পরেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে দখল করা হয়েছে।
জানা যায়, বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কতৃপক্ষ ২০১৮ সালে অধিগ্রহণকৃত জমির প্রস্থে চল্লিশ ফিট আবার কোথাও কোথাও ৩৫ ফিট (একর) করে অধিগ্রহণ করা হয়েছে।
কুয়াকাটার যে জমিতে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হয়েছে তা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অধিগ্রহণকৃত জমি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর।
এ ব্যাপারে কোন দপ্তর সঠিক কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করেছে এটির স্পষ্ট কোনো হদিস পাওয়া না গেলেও বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এমন কাজ হতে পারে বলে ধারণা করেন স্থানীয়রা।
কুয়াকাটা পর্যটন নগরীতে বছরের প্রায় সব ঋতুতেই পর্যটকের আগমন থাকে কমবেশি। তাই কুয়াকাটায় পর্যটন কেন্দ্রের সৌন্দর্য বর্ধনে নানামুখী পরিকল্পনা করে আসছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর। তবে কুয়াকাটা সৈকতের প্রধান প্রবেশ পথের তীব্র যানযট বিগত কয়েকবছরের। সৈকতের প্রধান প্রবেশ পথে মোটরচালিত যানবাহন রাখার জায়গার সংকীর্ণতার কারনে তীব্র যানযটেও ভীড় করে দারিয়ে থাকে পর্যটক সমাগমের সড়কের মুখে। সৈকতে প্রবেশের বেড়িবাঁধ সড়কের (পাউবো) পশ্চিমে রয়েছে জেলা পরিষদ ডাক বাংলো ভবন, পূর্বে রয়েছে ধানসিঁড়ি পরিদর্শন বাংলোর ভবন। কুয়াকাটা চৌরাস্তার জিরো পয়েন্ট থেকে আনুমানিক ১০০ মিটার উত্তরে রয়েছে পূর্বে একটি সংযোগ সড়ক। পূর্ব দিকের এই সংযোগ সড়কটি থাকার ফলে সৈকতে প্রবেশের মুখে বাঁধাগ্রস্থ হয় মহাসড়কের চলাচলরত যানবাহন। দ্বিতীয়তঃ সড়কের এপার ওপারে মোটরসাইকেল অটোভ্যানের অস্থায়ী আস্তানা গড়ে ওঠার প্রভাবে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন তীব্র যানজট লেগেই থাকে এবং সড়কের এপার ওপারে মোটরসাইকেল ও অটোভ্যানের অস্থায়ী স্টান্ড গড়ে ওঠার ফলে সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন তীব্র যানজট লেগেই থাকে।
স্থানীয় বেশ কয়েকজন মোটরসাইকেল অটো ভ্যান শ্রমিকরা জানিয়েছেন কুয়াকাটা চৌরাস্তা সড়ক এর আশেপাশে যানবাহন রাখার নির্দিষ্ট স্থান না থাকার ফলে সড়কের পাশে বাড়তি যে জায়গা আছে সেখানে তারা যানবাহন রাখে। তবে এ বিষয়ে ব্যবসায়ী শাহাদাত বলেন, কুয়াকাটা প্রেসক্লাব সংলগ্ন হতে শুরু করে চৌরাস্তা জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত যানবাহন রাখার শৃঙ্খলা না থাকায় প্রায় দূর্ঘটনা ঘটে। এই গতকাল একটা মারাত্মক আহতদের ঘটনা ঘটেছে। তিনি আরো বলেন প্রেস ক্লাব সংলগ্ন কিছু যানবাহন দাঁড়ানোর মত স্থান ছিল। এই গত ২৬শে সেপ্টেম্বর পর্যটন দিবস কে সামনে রেখে এর আগের দিন পরিচ্ছন্নতা অভিযান করেন কুয়াকাটা পৌরসভা পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। কুয়াকাটা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের অভিযানকালে একটি মহল কাজ বন্ধ করে দেয়, এর পরের দিন সড়কের পাশে দশ ফুট পরে পিলার দিয়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জমি আটকে দেওয়া হয়। যে কারণে সড়কে বর্তমানে সৈকতে প্রবেশের প্রধান পথে যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পর্যটক সমাগমের ঋতুতে এখানে যানজটের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাবে। তাই দ্রুত এ বিষয়গুলো সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরে নেওয়া উচিৎ। এতে পর্যটন কেন্দ্র এবং পর্যটকদের স্বার্থ জড়িত তাই এই সড়কটি যানজটমুক্ত থাকলে পৌরসভার মান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এতে করে সাধারণ মানুষ ভোগান্তির নিস্তার পাবে।
দখলকৃত জমিতে -সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তিতে- বলা হয়েছে, এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে দেওয়ানী ১৮৩/২০১৮ নং মোকাদ্দমা যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতের প্রদত্ত আদেশে অত্র মোকদ্দমা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিম্ন তফসিল বর্ণিত ভূমিতে ভোগ দখল ও নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ প্রদান করা হয়েছে। পরবর্তীতে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের সিভিল রিভিশন নং ৩৯০৯/২০১৯ এর উপর প্রদত্ত রায়ের স্থিতাবস্থা বহাল রাখা হয়েছে। এই মর্মে সতর্ক করা যাচ্ছে যে উক্ত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ অমান্য করে তফসিল বর্ণিত ভূমিতে অনুপ্রবেশকারী ব্যক্তিবর্গ আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
ভূমির তফসিলঃ জেলাঃ পটুয়াখালী, উপজেলাঃ কলাপাড়া, থানাঃ মহিপুর। জে এল নং ৫৭, মৌজা কুয়াকাটা, খতিয়ান নং ১২৫৭/১২৫৯, (বিএস) দাগ নং ৩২৫৭, ৩২৫৯, ৩২৬০, ৩২৬১, ৩২৬২, ৩২৬৩, জমির পরিমাণ ০.১১ একর।
এ বিষয়ে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যটন দিবস উপলক্ষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পৌরসভার সড়কের আশেপাশের ময়লা-আবর্জনা পরিচ্ছন্নতা অভিযানকালে একটি মহল কতৃক কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি এটি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো’র) কাজ হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। তবে সড়কের পাশে এই কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার ফলে যানবাহন চলাচলে ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিষয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কলাপাড়া উপজেলার নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব, আরিফ হাসান সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) পটুয়াখালী জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, সড়কের পাশে দখলকৃত জমি যদি সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সওজ) অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে হয়ে থাকে তবে অবশ্যই এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধিগ্রহণকৃত জমির মধ্যে সরকারের অন্য কোনো দপ্তরের কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার (দখল) কোন সুযোগ নেই।