সাধারণত আমি কারো দিকে তাকিয়ে কথা বলিনা, তবে ওর কথা শুনে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলাম, ওর চেহারা বেশ মলিন। তারপরও জোর করে ঠোঁটের কোণে এক রাশ হাসি ধরে রেখেছে।
জোর করেই তাদের বাড়িতে নিয়ে গেলো, আমি বললাম, আমার সাথে আরো দুইজন আছে, সে বললো সমস্যা নেই, চল…..
বাড়িতে গিয়ে আড়ালে ডেকে নিয়ে হাত ধরে জিজ্ঞেস করলাম, “সত্যিই কি ভালো আছিস?”
মাথা নিচু করে দূরে তাকিয়ে রইলো সে।
একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি ভালো নেই রে। আমি আর পারছি না নিতে। সত্যিই পারছি না।
একে তো পরিবারে চরম আর্থিক সংকট, নদীতে সব জমি চলে গেলো, তার ওপর আমার পড়াশোনার খরচ?
অসম্ভব! আমার বই তো দূরে থাক, খাতা কেনার মতোও সামর্থ্য নেই আমার!”
– “কেন, তোর আব্বকে বলিস নি?
চাচা তো যথেষ্ট কেয়ারফুল!”
সে অন্যমনস্ক হয়ে বলল, “নাহ, বলি নি। কেন বলব। আর্থিক সংকটকালে একটা সপ্তাদশী মেয়ে তার পরিবারের বোঝা হয়ে যায়৷”
শুনছি কথাগুলো। যা বুঝলাম…..
আসলে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা চরম পর্যায়ে নেমে গেছে নদী ভাঙ্গোনে। কিন্তু আত্মসম্মানবোধ টলটলে। মানুষকে তা বুঝতে দেয় নি। আর সে চরম জেদী মেয়ে, বাবা-মায়ের সাথে কোনো এক মান-অভিমানে দীর্ঘদিন যাবত সে আর কথা বলে না। এখন সামনে তার পরীক্ষা, কিন্তু নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো চেয়ে নিতে পারছে না একমাত্র জেদের কারণে!
তার সাথে একজনের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল, যিনি সুখে দুঃখে সর্বদাই তাকে সাহায্য করে গেছেন।
উনার কথাই তাকে বললাম,
“উনাকে বলেছিস সমস্যা টা খুলে?”
মাথা নিচু করে বলল, “বলতে চেয়েছি।
বলার চেষ্টাও করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু বলতে পারি নি।
তিনি শুনতেই চান নি। হঠাৎ সকল যায়গা থেকে ব্লক করে রেখেছেন। উনারই বা দোষ কোথায়। সচারাচর আজাইরা প্যাচাল পারি, তাই যখন নক দিয়েছি তখন তিনি হয়তো ভেবেছেন আজাইরা প্যাচাল পারার জন্যই আজও নক দিয়েছি!!!”
– “নক দেয়ার মূল কারণ? ”
– “উনি যথেষ্ট হেল্পফুল।
উনার থেকে শুধুমাত্র একটা টেস্টপেপার চাইতাম।
আর কিচ্ছু না!”
চুপচাপ শুনছি কথাগুলো।
আসলেই তো। একটা মানুষ কেমনে এতো চাপ সহ্য করে যাচ্ছে? শুধুমাত্র জেদের কারণে। কেউ এ জেদী মানুষগুলোকে বুঝতে চায় না। এমনকি পরিবারও না। শুধুমাত্র পরিবারই যদি আদর করে রাগ-ক্ষোভ ও অভিমান টা ভাঙাতো, তাহলে আর অন্যে কাছে নিজের কষ্ট টা শেয়ার করা লাগতো না।
এই জেদী মানুষগুলো না, প্রতি মুহুর্তেই খুনের শিকার হয়। না না না, এ সেই রক্তারক্তি খুন না। এ খুন হলো কথার দ্বারা খুন। খুন গুলো কাছের মানুষই করে, মা-বাবা-ভাই-বোন সহ পরিবারের বাকি সদস্য।
না পারে তাদের কাছে কিছু বলতে, না পারে চেপে রাখতে। চেপে রাখার ক্ষমতা নেই, কিন্তু চেপে রাখতেই হয়। যার ফলে চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে যায়।
আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, দেখ আমার কাছে কিছু টাকা আছে, তুই সেটা ধার নে, আমাকে সামনের মাসে দিয়ে দিস, তখন আমার লাগবে।
আমি নিজ থেকেই ধারের কথা বললাম, কারন তা না হলে ও কখনোই আমার কাছে টাকা নিতোনা।
যাই হোক, ভালো থাকুক সবাই।
সবার জীবনে আনন্দ থাকুক প্রতি টি মুহুর্তে…
মহান আল্লাহ পাক সবার হৃদয়ে প্রশান্তি দান করুন। আমীন!