শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড, আর সেই মেরুদন্ডের ভিত তৈরির কারিগর শিক্ষক। অথচ সহকারি শিক্ষিকা থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ের খায়রুল্লাহ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে যেন রীতিমতো গোয়ালে পরিণত করেছে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের নীতিমালা অনুসারে, বিদ্যালয়ের প্রতি ক্লাসে দুটি করে শাখাতে ৬০ জন করে মোট ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। সেই হিসাবে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতি শ্রেণিতে ১২০ জন করে বিদ্যালয়ে সর্বমোট ৬০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। এই সংখ্যার অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি সম্পূর্ণ নীতিমালা বহির্ভূত। অথচ দেদারসে প্রতিষ্ঠান চলছে ১৪০০ শিক্ষার্থী নিয়ে। এরমধ্যে প্রতি ক্লাসে আনুমানিক ২৩০ জন থেকে ৩০০ জন শিক্ষার্থী বিদ্যমান।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, প্রথমদিকে নিয়ম মেনেই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি এবং ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করার পর বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০০ জনই ছিল। কিন্তু বিদ্যালয়ের অন্য সকল শিক্ষকদের অগোচরে একক সিদ্ধান্তে মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে শুরু হয় শিক্ষার্থী ভর্তি।বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত শিক্ষার্থীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় সজাগ হন শিক্ষকবৃন্দ, তবে তাতেও কোনো ফায়দা হয়নি। উল্টো সাধারণ শিক্ষকদেরকেই পড়তে হয়েছে রোসানলে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং থানা নির্বাহী কর্মকর্তার এই ভর্তি বানিজ্যের সাথে পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত এবং তাদের মদদেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুনের সম্রাজ্য দীর্ঘায়ু লাভ করছে বলেও স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।
নাম না বলার শর্তে বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন,, ‘ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা প্রতিনিয়ত তিনি নিয়মবহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেন। তার এসকল নিয়মবহির্ভূত ভর্তির বিষয়ে কথা বলতে গেলে শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ করেন এবং নানাভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসেন। তার অসদাচরনমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরে আবেদন জানানো হয়েছে। তিনি (রহিমা খাতুন) সবসময় নিজের ইচ্ছা মতো কাজ করেন। অন্যান্য শিক্ষকদের কোনো কাজে লাগান না এবং তাদের বিরুদ্ধে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
অতিরিক্ত ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রহিমা খাতুন বলেন ,এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আসন সংখ্যা এবং ভর্তি নীতিমালা বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন বলেন, সরকারি স্কুলগুলোতে সাধারণত দুটি শাখায় ১২০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। এছাড়াও সরকারি কর্মকর্তারা বদলি হলে তাদের সন্তানরা ভর্তি হতে পারবে কিন্তু সেক্ষেত্রে ১০টি কোটার বেশী নয়।
অবৈধ এ দুর্নীতি তথ্য অনুসন্ধানে গেলে এশিয়ান টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার সাইফুল ইসলাম এবং দৈনিক শিক্ষা ডটকম এর স্টাফ রিপোর্টার জোবায়ের আদনানকে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় ফাসিয়ে দেন রহিমা খাতুন।
অবৈধ ভর্তি বানিজ্যের সাথে সম্পৃক্ততা বিষয়ে জানতে থানা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।