টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করা ও বাঁধা দেওয়ায় শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম মুন্নাফকে রাস্তায় আটকিয়ে লাঞ্চিত ও লোহার রড এবং ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে মারধর করে আহত করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় জাহিদ, সাগর, শাহাদত, বাছেদ, স্বপনসহ ৮-১০ জন বহিরাগত বখাটে ছাত্রের বিরুদ্ধে।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম মুন্নাফ উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের সিরাজকান্দি দাখিল মাদরাসার সহকারী (শিক্ষক) হিসেবে কর্মরত হিসেবে রয়েছেন। আহতদের মধ্যে শিক্ষক নজরুল ইসলাম বর্তমানে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন। আহত অপর শিক্ষক মুন্নাফ চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
সোমবার (৩০ মে) দুপুরে উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের পুনর্বাসন এলাকায় ওই দুই শিক্ষকের উপর হামলা চালায় বহিরাগত ওই বখাটে ছাত্ররা। মঙ্গলবার (৩১ মে) দুপুরে সিরাজকান্দি দাখিল মাদরাসা সুপার (প্রধান শিক্ষক) মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, মাদরাসা ছাত্রীদের কমনরুমের কাছে টয়লেটের উপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছিল জাহিদ ও সাগর নামের দুই বখাটে ছাত্র। এসময় মাদরাসার শিক্ষকরা টের পেলে বখাটে দুইজনের মধ্যে সাগর পালিয়ে যায় এবং জাহিদকে ধরে অফিস কক্ষে নিয়ে আসে শিক্ষকরা।
পরে পুলিশ ও মাদরাসার সভাপতিকে জানানোর কথা শুনে তাদের কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করে জাহিদ। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার সময় অন্যান্য ছাত্ররা তাকে ধরে ফেলে। পরে সুজন নামের তার এক বড় ভাই জাহিদকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।
আহত শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান- সোমবার দুপুরে আমি ও শিক্ষক শফিকুল ইসলাম মুন্নাফ টিফিনে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পুনর্বাসনের মাঝামাঝি কমিউনিটি ক্লিনিকের কাছে পৌঁছলে জাহিদ, সাগর, শাহাদত, বাছেদ, স্বপনসহ ৮-১০ বখাটে আমাদের মারার জন্য পথ আটকায়।
একপর্যায়ে বখাটেরা রড ও ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে মাথায় ও হাতে আঘাত করে আহত করে। পরে এলাকাবাসী ও আমার সহকর্মীরা আমাদের তাকে উদ্ধার করে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
মাদরাসার সুপার মাওলানা আব্দুল কদ্দুস জানান, ওই দিন আমি সকালে মাদরাসার কাজে ভূঞাপুর গিয়েছিলাম। দুপুরে জানতে পেলাম কিছু বখাটে ছাত্ররা মিলে আমার মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা নজরুল ইসলামকে লোহার রড ও ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে মারধর করে রক্তাক্ত করেছে। পরে তাকে উদ্ধার করে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে স্থানীয় ও অন্যান্য শিক্ষকরা। এ ঘটনায় বখাটে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. মোমেন সরকার বলেন, বহিরাগত ছাত্ররা শিক্ষকদের উপর হামলা চালিয়ে মারধর করে আহত করার ঘটনায় নেক্কারজনক যে ঘটনা ঘটিয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেইসাথে জড়িদের বিরুদ্ধে মাদরাসার সুপারকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম জানান, কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষককে মারধরের বিষয়টি মাদরসার সুপার জানিয়েছে। তাকে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে এবং এ ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা: ইশরাত জাহান জানান, এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনাগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।