খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বানারীপাড়ায় চাখার শের-ই-বাংলা স্মৃতি জাদুঘর। শের ই বাংলার চাখারের প্রানকেন্দ্রে ১৯৮২ সালে সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের অধীন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ২৭ শতক জমির ওপর “শের-ই বাংলা স্মৃতি জাদুঘর” নির্মাণ সহ আনুষাঙ্গিক কাজ শুরু করা হয়। আয়তকারাকৃতি ভূমি পরিকল্পনায় ৪৩ মিটার দীর্ঘ ও ১৪.৬০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট এ জাদুঘরটি নির্মাণ করা হয়। জাদুঘরের এ জমিটি শের-ই বাংলার নিজস্ব বসত ভিটার অংশ। জাদুঘর লাগোয়া দক্ষিন পশ্চিম পাশে শের-ই বাংলার বিশ্রামাগার ও ফজলুল হক ইনস্টিটিউশন, পূর্ব পাশে মসজিদ,পারিবারিক কবরস্থান,পিছনে উত্তর প্রান্তে বসতভিটা এবং এর অদূরে ১৯৪০ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সরকারী ফজলুল হক কলেজ রয়েছে। ১৯৮৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে এ জাদুঘরটি চালু সহ জনবল নিয়োগ করা হয়। এখানে বর্তমানে ৭জন ষ্টাফ কর্মরত রয়েছেন। জাদুঘরের ভিতরে মোট ৫ টি কক্ষ রয়েছে। পশ্চিম প্রান্তের কক্ষটি সহকারী কাস্টোডিয়ানের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জাদুঘরে রয়েছে ৩টি ডিসপেস্ন রুম, একটি অফিস ও লাইব্রেরী রুম এবং একটি ডরমেটরী। ঢুকেই হাতের বাঁদিকে শেরে বাংলা একটি বিশাল প্রতিকৃতি তার জীবনকর্মের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, সামাজিক রাজনৈতিক, পারিবারিক ছবি, পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত শেরে বাংলার বিভিন্ন কর্মকান্ডের ছবি। জাদুঘরে ফজলুল হকের ব্যবহৃত নিদর্শনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাম কেদারা, কাঠের খাট, তোষক, আলনা, ড্রেসিং টেবিল, টুল, চেয়ার-টেবিল, হাতের লাঠি, পানীয় জলের গস্নাস, কিছু মালপত্র। মাঝের বড় দু’টি কক্ষে শের-ই বাংলার বিরল আলোকচিত্র,ব্যবহৃত আসবাবাপত্র,চিঠিপত্র ও দ্রব্যাদি সহ একটি কুমিরের খোলস রয়েছে। একসময় জাদুঘরে রক্ষিত ছিল পুরাকীর্তিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল কালো পাথরে নির্মিত অষ্টভুজা মারীচী দেবী মূর্তি, ব্রোঞ্জের খসপর্ণ বৌদ্ধ মূর্তি,কালো পাথরে একটি বড় শিবলিঙ্গ, স্বর্ণমুদ্রা, সাধা পাথরের ছোট শিব মূর্তিসহ ছাপাঙ্কিত রৌপ্য মুদ্রা, শ্রীলংঙ্কা, ব্রিটিশ ও সুলতানি আমলরে তাম্র মুদ্রাসহ অন্যান্য প্রত্ন নিদর্শন। এগুলো এখন বরিশাল বিভাগীয় জাদুঘরে রক্ষিত রয়েছে। এদিকে জাদুঘরের গেটের পাশেই রয়েছে টিকেট কাউন্টার, জনপ্রতি টিকেটের দাম দশ টাকা করে, তবে পাঁচ বছরের কম কোন বাচ্চার জন্যে টিকেট এর দরকার পড়ে না। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ের শিশু-কিশোরদের জন্য প্রবেশ মুল্যে নির্ধারন করা হয়েছে ৫ টাকা। সার্কভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য ২৫ টাকা এবং অন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকেটের মূল্য একশত টাকা করে। গ্রীষ্মকালে জাদুঘর সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। মাঝখানে দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত আধ ঘণ্টার জন্যে বন্ধ থাকে। আর শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শীতকালেও দুপুর ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। আর সবসময়ের জন্যেই শুক্রবারে জুম্মার নামাজের জন্যে সাড়ে বারোটা থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ থাকে। রবিবার সাধারণ ছুটি এবং সোমবার বেলা দেড়টা থেকে খোলা থাকে। এছাড়াও সরকারী কোন বিশেষ দিবসে জাদুঘর উন্মুক্ত থাকে। অবিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা শের-ই বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে ও ধারণা দিতে এ জাদুঘরটি ভূমিকা রাখছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা মহান এ নেতার স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শণে আসেন। এখানে বিভিন্ন সময় মন্ত্রী,প্রতিমন্ত্রী,সচিব,জাতীয় সংসদ দের চিফ হুইপ, হুইপ,এমপি,বরেণ্য রাজনীতিক,বিভিন্ন দেশের কুটনীতিক,সাংবাদিক,গবেষক পরিদর্শনে এসেছেন। কিন্তু বহুতল ভবন নির্মাণ সহ জাদুঘরটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। পরিদর্শনের সময় অনেকেই নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও তা পরে প্রতিশ্রম্নতির মধ্যেই থেকে যায়। এমনকি শের-ই বাংলার একমাত্র পুত্র প্রয়াত একে ফায়জুল হক তিন বার সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন সময় সরকারের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও পিতার স্মৃতিঘেরা এ জাদুঘরটিকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ করতে কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। জাদুঘরের একতলা ভবনটি ভেঙ্গে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ,শের-ই বাংলার শৈশব,কৈশোর, ছাত্র জীবন,বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ও কর্মময় জীবন সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে তার ওপর গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন,পর্যটকদের সঙ্গে আসা শিশুদের জন্য পার্ক নির্মাণ,পর্যটকদের থাকার জন্য আবাসস্থল,শের-ই-বাংলার বিষয়ে আরও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও দক্ষ জনবল বাড়ানো সহ জাদুঘরটিকে আরও সমৃদ্ধ করা হলে দর্শনার্থী পর্যটকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি সরকারের রাজস্বও বৃদ্ধি পাবে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শাহে আলম বলেন, অবিভক্ত বাংলার মূখ্যমন্ত্রী বিশ্ববরেণ্য নেতা শের-ই-বাংলা আবুল কাসেম ফজলুল হকের স্মৃতিকে ধরে রাখতে ও তার আদর্শকে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে আলাপ করে তাঁর স্মৃতি জাদুঘরটিকে আরও উন্নত,সমৃদ্ধ ও আকর্ষনীয় করে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।